ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবির সমর্থনে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন। রোববার সন্ধ্যায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ সংলগ্ন মিরপুর সড়ক অবরোধ করে কিছুক্ষণ পর সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন। এর ফলে সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত মোড় ও এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, যা সাধারন মানুষ ও যাত্রীদের জন্য ব্যাপক দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজের ভর্তির আসন কমানো এবং বিভিন্ন দিক থেকে তাদের দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি এবং কয়েকজন শিক্ষক তাদের অপমানজনকভাবে বের করে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি, তাদের দাবিগুলি পূর্ণ মেনে না নিলে তারা রাস্তা ছাড়বেন না।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন কালবেলা বলেন, “আমরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাবির প্রো-ভিসির কাছে গেলে তাদের পক্ষ থেকে আমাদের অপমান করা হয় এবং তৎক্ষণাৎ বের করে দেওয়া হয়। এখন আমাদের নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব।” তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয়া হয়, তাহলে রাস্তা ছাড়ব না।”
শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ২০২৪-২৫ সেশনে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করা, শ্রেণিকক্ষে ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়েই ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা, নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করার দাবি এবং সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ভর্তি ফি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নতুন অ্যাকাউন্টে জমা রাখার দাবি।
শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, যদি তাদের পাঁচ দফা দাবি দ্রুত মেনে না নেওয়া হয়, তাহলে তারা আগামী দিনে আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে পারেন। শিক্ষার্থীদের একাধিক প্রতিনিধি জানান, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চান, তবে তাদের দাবি মেনে না নিলে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ঘটনার পর, সায়েন্সল্যাব মোড়ে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে, যা এলাকাবাসী এবং যাত্রীদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দাবিগুলি শিক্ষার মান ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পর্কিত। তারা দাবি করেন যে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এবং সমস্যাগুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। এই প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে তারা তাদের অভিযোগ তুলে ধরেছেন এবং দাবি করছেন যে, তাদের সংকট সমাধানে সরকার ও প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এছাড়া, শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি তাদের দাবির প্রতি উদাসীন থাকে, তবে তারা আরও ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত। তারা মনে করেন, এই আন্দোলন শুধুমাত্র তাদের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, শিক্ষার পরিবেশ যদি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ না হয়, তবে তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আঘাত হানবে।
তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই প্রতিবাদ এবং আন্দোলন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন যতক্ষণ না তাদের দাবিগুলি পূর্ণভাবে মেনে নেওয়া হয়।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান করছিল এবং তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা সোচ্চার ছিলেন। তাদের দাবির প্রতি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, বিভিন্ন পরিবহন সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুক্ষণের জন্য এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয় এবং সায়েন্সল্যাব মোড়সহ আশপাশের সড়কে ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। সাধারণ মানুষদের জন্য এটি এক ধরনের বিরক্তির কারণ হলেও শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে একযোগে এই আন্দোলন করছেন।
আন্দোলনকারীরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, তাদের দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে তারা আরও বড় পদক্ষেপ নেবেন। তাদের বিশ্বাস, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।