ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা’আর হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরাজয় স্বীকার করেছেন। শুক্রবার ইসরাইলি টিভি চ্যানেল-টুয়েলভকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক মাস ধরে অভিযান চালানোর পরেও তারা একটিও বন্দি মুক্ত করতে সক্ষম হয়নি। সা’আর বলেন, "সরকার হিসেবে আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে, তবে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, “হামাসের ওপর আমরা বড় ধরণের আঘাত হেনেছি, তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গতভাবে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলেন। একদিকে তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল হামাসকে ধ্বংস করা, আর অন্যদিকে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরাইলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষকরাও একই মত পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন, গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধে ইসরাইলের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ বিশ্লেষক ইসরাইলের অপারেশনগুলোকে একটি ব্যর্থ অভিযান হিসেবে গণ্য করেছেন। তারা বলছেন, যুদ্ধের দীর্ঘ সময়কাল এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক আক্রমণ সত্ত্বেও, ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়নি।
এদিকে, গত বুধবার হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে, আর ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের কারাগারে আটক সহস্রাধিক বন্দিকে মুক্তি দেবে। যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় প্রথম দফায় বন্দি বিনিময় শুরু হবে রোববার থেকে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় এক ভয়াবহ অভিযান শুরু করে। এই অভিযানটি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় পরিচালিত হয়। ১৫ মাসের দীর্ঘ এই যুদ্ধে, ৪৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহিদ হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এক লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন, এবং বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
ইসরাইলের লক্ষ্য ছিল হামাসকে ধ্বংস করা এবং গাজার বন্দিদের মুক্তি আনা। কিন্তু এ পর্যন্ত এই লক্ষ্যগুলোর কোনটাই পূর্ণ হয়নি। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে যে, তাদের হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে, এই পরাজয়ের পরও ইসরাইল সরকারের পক্ষ থেকে কিছু মন্তব্য শোনা যাচ্ছে, যেখানে তারা দাবি করছে যে যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের কিছু কৌশলগত সুবিধা অর্জিত হয়েছে। তবে এসব দাবি এখনো বাস্তবে পরিণত হয়নি এবং ইসরাইলের জনগণও সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
ইসরাইলের এই পরাজয় ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ও মানসিক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, দীর্ঘ সময়ের সংগ্রামের পর তাদের ন্যায়বিচারের স্বীকৃতি মিলেছে, এবং যুদ্ধের যন্ত্রণা সত্ত্বেও তারা শেষ পর্যন্ত নিজেদের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।
এদিকে, পশ্চিমা শক্তির পাশাপাশি আরব বিশ্বের দেশগুলোও এই যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান গ্রহণের পক্ষে কথা বলছে, এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে একযোগভাবে আন্দোলন চালানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
এখন ইসরাইলের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কিভাবে তারা যুদ্ধের পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। যুদ্ধবিরতির চুক্তির পরের পরিস্থিতি অনেকটাই অনিশ্চিত, এবং এর প্রভাব শুধু ইসরাইল ও হামাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতেও গভীর পরিবর্তন আনতে পারে।
এছাড়া, ফিলিস্তিনিরা জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা যদি তাদের স্বাধীনতা অর্জনে সফল হয়, তবে এটি পুরো অঞ্চলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে। তাদের মতে, এই যুদ্ধে তাদের পরাজয় নয়, বরং বিজয় প্রায় নিশ্চিত।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের শেষ কোথায়? এবং ইসরাইলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? এর উত্তরের জন্য সবাই আগ্রহী।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।