জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে সাময়িক বহিস্কৃত আল সাদিক হৃদয়ের বিরুদ্ধে আবারো নারী শিক্ষার্থী কে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এমন একটি অভিযোগ পত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক নারী শিক্ষার্থী। এছাড়া বুধবার সাংবাদিকের উপর হামলার চেষ্টা অভিযোগে আরো একটি অভিযোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিক।
অভিযোগ পত্র ও ওই নারী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে কয়েকজন বান্ধবীসহ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসলে সমাজবিজ্ঞান ১১তম ব্যাচের আল সাদিক হৃদয় ও তার সহযোগী অর্থনীতি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের মেহেদী হাসান মুন তাকে ক্যাম্পাসের শান্ত চত্ত্বরে ডেকে পাঠায়। কিন্তু সে না গেলে নানা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। আর বলে এসব আমি করতেই থাকব তোমার ভালো না লাগলে ক্যাম্পাসে আসবা না। এরপর তাকে ও তার বান্ধবীদেরকে পিছপিছু উত্ত্যক্ত করতে করতে বাসার কাছাকাছি যায়।
ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত আল সাদিক হৃদয় তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল কিন্তু তিনি তা মেনে না নেয়ায় বিভিন্ন ভাবে তাকে হয়রানি করে সাদিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। মাঝে মাঝে ড্রিংকস করে তার বাসার সামনে আল সাদিক ও তার বন্ধুরা মিলে মটর সাইকেলের হর্ণ বাজাতো। ক্যাম্পাসে আসলে আশপাশে ঘুরতো, বিভিন্ন জনের মাধ্যমে ডেকে পাঠাতো। ডাকে সাড়া না দিলে নিজেই গিয়ে বিভিন্ন রকম থ্রিট দিতো এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করত। কিছু বললেই বলত আমার সাথে কথা বললে ক্যাম্পাসে আসতে পারবা না। এই ক্যাম্পাস এখন আমাদের। এছাড়া নোংরা ভাষায় হুমকি দিতো। ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী আরো বলেন, চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে আল সাদিকের নির্দেশে তারই কিছু সহযোগী।
এদিকে গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তচত্ত্বরের কাছে মটর সাইকেলে থাকা অবস্থায় এক নারী শিক্ষার্থীর শারীরে খুব নোংরা ভাবে স্পর্শ করায় সরি বলে পার পেয়ে যায় আল সাদিক ও তার সহযোগী ইতিহাস বিভাগের ১২ তম ব্যাচের নুর আলম। তাৎক্ষনিক এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে একটি প্রত্রিকার সাংবাদিককে আক্রমন করতে যায় আল সাদিক ও তার বন্ধু নৃবিজ্ঞান ১১ তম ব্যাচের সাজেদুল নাঈম, তার সহযোগী ইতিহাস বিভাগের ১২ তম ব্যাচের নুর আলমসহ কয়েকজন। এসময় তাদেরকে আটকাতে গিয়ে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয় গেটের কাছে দায়িত্বরত এসআই মাইদুল ইসলাম। উক্ত ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করলে সেই সাংবাদিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিককে নানা ভাবে হুমকি দেন তারা। এঘটনায় বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর অভিযোগ জমা দিয়েছেন সেই সাংবাদিক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে কনসার্ট চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ এবং গত বছরে ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে রাব্বি মিয়া নামক একজন ঘোড়ার গাড়ি চালককে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয় রাব্বি মিয়া এতে নেতৃত্ব দেন আল সাদিক হৃদয়। এ দু’টি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল-সাদিক কে সাময়িক বহিস্কার করে।
এছাড়া চলতি বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে মেসেজ চালাচালির জের ধরে জবির সাবেক দুই শিক্ষার্থীকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর অভিযোগে ৭ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্যতম সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আল সাদিক হৃদয়। এদিকে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে আল সাদিক হৃদয় ও তার সহযোগীরা দৈনিক প্রায় ১০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন।
এসমস্ত অভিযোগের বিষয়ে আল সাদিক হৃদয় বলেন, টিএসসিতে আমরা সবসময় যাতায়াত করি চা খাই। আমরা চাঁদাবাজি করি না। মটর সাইকেলে থেকে নারী লাঞ্চিত করার ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, মেয়ের গায়ে আমাদের মটর সাইকেল লেগেছে তাই আমি ৭-৮ বার সরি বলছি মেয়েকে। কিন্তু ১৬ তারিখের বিষয়টি জানতে চাইলে ফোন করে রাখেন।
এবিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মোস্তাফা কামাাল বলেন, অভিযুক্তের নামে আরো বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তার সবগুলো বিষয় আমলে নিয়ে বিচারের আওতায় আনা হবে। এছাড়া যারা ক্যাম্পাসে অপকর্মে করবে তাদের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে যদি কেও চাদাবাজি করে থাকে এবং তাদের নাম জানতে পারলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
উল্লেখ্য, আল সাদিক ও নুর আলম দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্গলা ভঙ্গের দায়ে সাময়িক বহিস্কৃত।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।