ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবীর স্বাধীন (২৫) শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতালে ২২ ঘণ্টার কম সময় চিকিৎসা নেয়ার পর মারা যান স্বাধীন। এই সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল করেছে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকার উপরে। এতো কম সময়ে এতো মাত্রাতিরিক্ত বিল আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।তারা এই বিলকে ভুয়া, প্রতারণামূলক বলে দাবি করেছেন। বিলপত্রে ইস্যুকৃত সময় থেকে জানা যায়, ঢাবি ছাত্র ফিরোজকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত ১১ টা ২২ মিনিটে।ডাক্তারের ভাষ্যমতে, ফিরোজ মারা গেছেন ২৬ জুলাই (শুক্রবার) রাত ৯টা ১০ মিনিটে।ফলে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২২ ঘন্টারও কম সময়। এ সময়ে তার বিল হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা।
বিলপত্রে দেখা যায়, ওষুধ বাবদ দেখানো হয়েছে ৩২ হাজার ৩২১ টাকা। ডাক্তারের ভাষ্যমতে, স্যালাইন ও নরমাল কিছু ওষুধ বাবদ এক্ষেত্রে খরচ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হতে পারে। ২২ ঘণ্টার বেড চার্জ বাবদ ২৪ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে, যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। মেডিকেল গ্যাস এণ্ড ভেন্টিলেশন বাবদ ৭৩ হাজার ৮৩৬ টাকা ধরা হয়েছে, যা মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে বলে জানা যায়।বিলে রক্তের ক্রসম্যাচ দেখানো হলেও, সেটা পরীক্ষা না করিয়েই বিল করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন খাতে ইচ্ছেমতো বিল বসানো হয়েছে। বিলের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আলমগীর বাদশা বিবার্তাকে বলেন, হাসপাতালগুলো যেখানে মানুষের সেবা দেয়ার কথা, সেখানে তারা সেবার পরিবর্তে ডাকাতি শুরু করেছে। ২২ ঘণ্টায় কিভাবে এতো বিল আসে? এসব হাসপাতালকে বয়কট করে এদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত।
সজীব মিয়া নামের ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, স্কয়ার হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় এরআগে আমাদের ভার্সিটির এক বড় ভাই পঙ্গু হয়েছেন।এবার সেই হাসপাতালটিতে আবার স্বাধীন ভাই মারা যাওয়ার পরেও বিলের নামে তামাশা শুরু করেছে।স্কয়ারের এখনই লাগাম টেনে ধরা উচিত। বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, হাসপাতালের বিল দেখে আমরাও আতকে উঠেছিলাম।পরে গোলাম রাব্বানীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নেতারা এ বিষয়টি দেখেছেন।তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
তবে এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বঙ্গবন্ধু হল সংসদের সহ সভাপতি (ভিপি) আকমল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, মাত্রাতিরিক্ত বিল দেখে গোলাম রাব্বানী ভাই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে একজন ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালে যান। আর সে ডাক্তার স্কয়ারের ইস্যুকৃত বিলে অনেক ত্রুটি খুঁজে পান।যার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনার মাধ্যমে রাব্বানী ভাই ৫৭ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা মওকুফ করান।বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। এদিকে, এই বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নেয়ার জন্য গেলে হাসপাতালের এক কর্মী কয়েকটি রুম ঘুরিয়ে বলেন দেখতেই পাচ্ছেন কোনো রুমে কোনো কর্মকর্তা নেই। তাই এখন কারো বক্তব্য পাবেন না।কালকে আসলে হয়তো পেতে পারেন।
উল্লেখ্য, ঢাবি শিক্ষার্থী ফিরোজ গত এক সপ্তাহ যাবত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় স্কয়ার হাসপাতালে। পরে সেখানে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।