বিসিএসে সফল হওয়ার কিছু উপায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:২২ পূর্বাহ্ন
বিসিএসে সফল হওয়ার কিছু উপায়

বিসিএস অনেকের স্বপ্ন, কিন্তু এই স্বপ্নটা হাতে পাওয়া অনেক কষ্টকর। যারা সরকারি চাকরি করতে আগ্রহী তাদের স্বপ্ন বিসিএস। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা অনেকের মনে থাকলেও সঠিক নির্দেশনার অভাবে এগুতে পারেন না। অনেকেই হয়তো চাকরি করে কোচিং করতে পারবেন না এই ভেবে আর পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন না।

বিসিএসে সফল হওয়ার উপায় অনেক ব্যাপক, কিন্তু তারপরও চলুন কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক...

পরিকল্পনা: প্রথমেই বিসিএস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জোগাড় করে ফেলতে হবে। পরীক্ষার তারিখ, সিলেবাস, পরীক্ষার ধাপসমূহ, আবেদনের শেষ তারিখ, আসন সংখ্যা ইত্যাদি জেনে রাখুন।

পড়ার সঙ্গী নির্বাচন: গ্রুপ স্টাডি এই পরীক্ষার জন্য খুবই জরুরি। বিশেষ করে যারা নতুন পরীক্ষার্থী তাদের পুরনো পরীক্ষার্থীর সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতে হবে। একাধিক সঙ্গী হলে ভালো। তবে এমন কাউকেই আপনার পড়ার সঙ্গী বানাতে হবে যে আপনার মতোই সিরিয়াস এবং যার সঙ্গে আপনার এক সঙ্গে পড়ালেখা করতে সুবিধা হবে। এতে করে অনেক ছোট খাটো পড়ার কৌশল শেখা যায়। কিভাবে পড়া শুরু করা উচিত, কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে, ইত্যাদি। ভালো সার্কেলের সঙ্গে পড়ালেখা করলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

বই সংগ্রহ: বাজারে বিসিএসের জন্যে অনেক বই আছে। এর মধ্যে বেছে নিতে হবে ভালো মানের বই। এই জন্য বিসিএসে উত্তীর্ণ সিনিয়র কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়া, ফেইসবুকে অনেক গ্রুপ আছে, যেগুলোতে অনেক তথ্য পাওয়া যায় কোন কোন বই কেনা উচিত, সংগ্রহ করা উচিত। বিষয় অনুযায়ী বই কিনে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে একটি বিষয়ের জন্যে একের অধিক বই সংগ্রহ করা যেতে পারে।

পড়ার পরিবেশ: পড়ার পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রে পড়ার মনোযোগ তৈরি করা, আগ্রহ তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোথায় পড়বেন সেটা নির্বাচন করে ফেলুন। বাসায় পরিবেশ না থাকলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অথবা কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে চলে যেতে পারেন। অথবা কোনো পড়ার সঙ্গীর বাসায় কয়েকজন মিলে পড়ার পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারেন।

টাইম টেবিল: আগেই জেনে নিন ঠিক কত সময় হাতে আছে আপনার এবং প্রতিদিন কত ঘণ্টা সময় আপনি পড়বেন। কোন বিষয়ের জন্য কত ঘণ্টা বরাদ্দ করবেন সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন বিষয় কতটা পারদর্শী। তবে নিশ্চিত করুন প্রতিদিন যেন সব বিষয় পড়া হয়। সেই হিসেবে ভাগ করে নিন আপনার সময়কে। চাকরিজীবীদের অফিস পরবর্তী সময় এবং ছুটির দিনগুলোতে সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।

কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা: অনেকেই বলে কোচিং ছাড়া বিসিএসে চান্স পাওয়া সম্ভব না। আবার অনেকেই বলে কোচিং করলে সময় নষ্ট হয়। আসলে কোচিংয়ের গুরুত্বটা সম্পূর্ণ আপনার ওপর নির্ভর করবে। আপনি যদি নিজে নিজে পড়তে না পারেন এবং যথেষ্ট পরিমাণে মনোযোগী না হন তাহলে কোচিংয়ে যাওয়াই উত্তম। কোচিংয়ের বিকল্প হিসেবে আপনি কোনো প্রাক্তন পরীক্ষার্থী থেকে নিয়মিত অথবা সপ্তাহে দুই একদিন গাইড নিয়ে নিতে পারেন। নিয়মিত পড়াশোনা করাটাই আসল উদ্দেশ্য।

পূর্ববর্তী বিসিএসের প্রশ্ন: পূর্ববর্তী বিসিএসের প্রশ্ন হুবহু না আসলেও, সেই প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এতে আসন্ন বিসিএসে কী ধরনের প্রশ্ন হতে পারে আপনার ধারণা হয়ে যাবে কম বেশি। প্রশ্নের মান, কোন বিষয়ে আপনার কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে এগুলো জানা যাবে।

মডেল টেস্ট: যে কোনো পরীক্ষার জন্যেই মডেল টেস্টের গুরুত্ব অনেক। মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্যে আপনার প্রস্তুতি কেমন সেটা সম্পর্কে ধারণা দেবে এবং আপনার কোন বিষয়ে আরও কত জোর দিতে হবে সেটাও জানতে পারবেন। নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতে হবে। ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার আগ পর্যন্ত নিজে নিজেই মডেল টেস্ট দিতে পারেন। ভালো প্রস্তুতি নেওয়া হলে কোচিংয়েও দিতে পারেন টেস্ট।

ফেইসবুকের মাধ্যমে স্টাডি: ফেইসবুকে বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য আছে অনেক গ্রুপ। কিছু কিছু গ্রুপ পরিচালিত হয় পূর্বে বিসিএসে উত্তীর্ণ কোনো ক্যাডারের দ্বারা। আপনি সেই গ্রুপগুলোতে নিয়মিত ফলো করলে অনেক আপডেটেড তথ্য পাবেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে নিতে পারেন গ্রুপের সদস্যদের সাহায্য। এতে করে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

পরীক্ষার ধরণ অনুযায়ী প্রস্তুতি: বিসিএস পরীক্ষা কয়েকটি ধাপে হয়। ধাপ অনুসারে প্রস্তুতি নিতে হবে। এক এক ধাপের সিলেবাস একেক রকম। এ কারণে ধাপ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।

যেভাবে পড়বেন: আপনি নবম দশম শ্রেণির ক্লাশের শিক্ষার্থীদের গণিত, বিজ্ঞান বইগুলো পড়ুন। প্রাথমিক প্রস্তুতির জন্য বাজারে সাম্প্রতিক তথ্যাবলি নিয়ে সংকলন পাওয়া যায়। যাচাই বাছাই করে একটি ঢাউস সাইজের বই কিনে নিতে পারেন। প্রতিটি অধ্যায়ের ভূমিকাটুকু ভালো করে পড়ে ফেলবেন। প্রয়োজনে রঙিন কলম দিয়ে দাগিয়ে রাখবেন। প্রতিদিন নিয়মিত পত্রিকা পড়বেন। আপনার মাথায় থাকবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি, বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কার, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বশেষ তথ্য।

কম্পিউটার, ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য। চমকপ্রদ এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলো নোটস আকারে খাতায় লিখে রাখতে পারেন। পেপার কাটিং অ্যান্ড ক্লিপিংস করে রাখতে পারেন। তবে পেপার কাটিং রাখার আগে আর্টিকেলগুলো ভালোভাবে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কলম দিয়ে দাগিয়ে রাখবেন। পরীক্ষার আগে পুনরায় চোখ বুলানোর সময় আপনার সেই তথ্যগুলো কাজে লাগবে। বাংলা ইংরেজির ক্ষেত্রে নবম দশম শ্রেণির গ্রামার বই আত্মস্থ করে ফেলুন। ইংরেজি শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুন। পাঠ্য বইয়ের বাইরেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখকের উপন্যাস, ঐতিহাসিক উপন্যাস, অনুবাদ, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাংলা ইংরেজি সাহিত্যের লেখক এবং তাদের উল্লেখযোগ্য লেখা সম্পর্কে জানুন। নবম দশম শ্রেণির পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।

আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখবেন বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থীর পড়াশোনা, মেধা, বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের সব রকম উপায় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়। তাই প্রশ্ন অনেক সময় বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের জন্যও হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার সর্বোচ্চ বিচার-বুদ্ধির পরিচয় দিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। আপনার টেবিলের সামনে দেয়াল জুড়ে একটা বিশ্ব ম্যাপ এবং বাংলাদেশের ম্যাপ রাখুন। যখন আন্তর্জাতিক কোনো বিষয় পড়বেন বা বাংলাদেশের কোনো তথ্য জানবেন তখন ম্যাপে দেশটির অবস্থানের ওপর চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার বিশ্ব এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো জানা হবে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান মনে রাখার দক্ষতা থাকতে হবে। আরেকটি কাজ করবেন, একটি বড় আর্ট পেপার নেবেন। সেই পেপারে বিশ্বের সবগুলো দেশের নাম, প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর নাম, মুদ্রা, স্বাধীনতা কাল, রাজধানী, প্রধান আমদানি-রপ্তানি পণ্য ইত্যাদি লিখে রাখুন। মনে রাখবেন আপনি যতবেশি তথ্য ধারণ করতে পারবেন ততবেশি আপনার সম্ভাবনা থাকবে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার। আপনি পড়াশোনা বা পার্টটাইম জব করেন। এর ফাঁকেও আপনার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কোনো টাইম ফ্রেম রাখার প্রয়োজন নেই। নিজস্ব সৃজনশীলতা না থাকলে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা শক্ত হবে। তাই নিজেকেই সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আশা করি টিপসগুলো আপনাদের সহায়ক হবে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর