শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ১৯৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয় প্রায় চার বছর আগে। তবে সেগুলোতে ডাটাবেইস সংযোগ এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এ কারণে স্থাপনের চার বছরে এক দিনও ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯টি বিদ্যালয়ে স্থাপনের পর প্রায় চার বছর পার হওয়ায় এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মেশিনগুলোর ওয়ারেন্টির মেয়াদও।
এদিকে দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে নষ্টের পথে বেশির ভাগ মেশিন। এসব মেশিন আদৌ চালু করা হবে কি না, সেটিও জানে না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষক নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় ছুটি থাকায় মেশিনগুলো চালু করা হয়নি। মেশিন সরবরাহকারীকেও খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা।
সরেজমিনে গিয়ে একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় নির্দেশনায় কালকিনি উপজেলার ১৯৯টি বিদ্যালয়ে একসঙ্গে ডিজিটাল (বায়োমেট্রিক) হাজিরা মেশিন বসানো হয়। ডিজিটাল হাজিরা মেশিনগুলো সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের কথামতো কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল বিদ্যালয়গুলোকে। তখন বেশি দামে মানহীন ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার অভিযোগ উঠলেও করোনার কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। ভ্যাটসহ প্রতিটি মেশিন ১৮ হাজার টাকা দরে কেনা হয়েছিল।
তাতে মোট খরচ হয় ৩৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নকাজের (স্লিপ ফান্ডের) টাকা সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। শিক্ষকরা মাঝেমধ্যে মেশিনগুলো ভালো রাখার জন্য বৈদ্যুতিক চার্জ দিয়ে রাখেন। এভাবে অকেজো পড়ে থাকার কারণে বর্তমানে অনেক বিদ্যালয়ের মেশিন বিকল হয়ে পড়েছে।
শিক্ষক নেতা ১ নম্বর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নিজাম ঢালী বলেন, ‘২০১৮ সালে শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলামের কথায় আমরা ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনতে বাধ্য হয়েছিলাম স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে।
আমি মেশিন কেনার ব্যাপারে জড়িত না। প্রধান শিক্ষকরা তাঁদের মতো করে মেশিন কিনেছেন। আমাদের কোনো প্রভাব ছিল না। আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মেশিনে মাঝেমধ্যে চার্জ দিয়ে রাখেন।
ডিজিটাল হাজিরা মেশিন অকেজো হওয়ার ও তাঁদের কথামতো মেশিন কেনার ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, ‘ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনায় আমাদের কোনো হাত নেই। মেশিন কিনছেন প্রধান শিক্ষকরা। তবে প্রধান শিক্ষকদের মেশিন চালু করার কথা বললেও তাঁরা মেশিন চালু করছেন না।
কালকিনি উপজেলার সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনবেন। প্রধান শিক্ষকরা মেশিন কিনে ভাউচার দাখিল করেছেন।
বায়োমেট্রিক মেশিন নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিংকি সাহা বলেন, ‘আমি তো জানি না। শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে বলতে পারব কী অবস্থায় মেশিনগুলো আছে।
মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অধিদপ্তরের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে মেশিনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কিন্তু আমরা এখনো অধিপ্তরের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা না পেলে মেশিন অকেজো হয়ে পড়লেও আমরা কিছু করতে পারছি না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।