প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২:৫৯
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
বরিশালের বানারীপাড়ার দুটি পরিবারে আজও বুকভরা শোক। রাজধানীতে বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলনে প্রাণ হারানো হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন ও আল-আমিন রনির সন্তানরা আজও বাবার জন্য অপেক্ষা করছে। এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও ফিরে আসেনি সেই প্রিয় মুখগুলো।
গত বছরের ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জসিম উদ্দিন। তার রেখে যাওয়া স্ত্রী সুমি আক্তার এবং দুই সন্তান জান্নাত ও সাইফ এখনও বাবার জন্য হাহাকার করছে। মা সুমি বলেন, “স্বামীকে হারিয়ে সব আনন্দ শেষ। সন্তানরা বাবার কথা মনে করে কাঁদে। আমি অসহায়।”
জসিমের মা মেহেরুন্নেছা বেগম কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, “এক বছর ধরে পোলাডার মুখ দেখি না। আল্লাহ যেন ওরে বেহেশত দান করেন।” অসুস্থ মাকে দেখাশোনা করতেই স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন জসিম।
অন্যদিকে, রনি মারা যান ১৯ জুলাই মহাখালীতে সংঘর্ষের সময়। তখন তার স্ত্রী মিম আক্তার ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। কয়েক মাস পর জন্ম নেয় কন্যা সন্তান রোজা। কিন্তু বাবাকে দেখার সুযোগ হয়নি তার। রোজা আজ নয় মাসের, বড় হচ্ছে বাবার স্নেহ ছাড়াই।
রনির মা মেরিনা বেগম বলেন, “ছেলেটার কত স্বপ্ন ছিল। বাবা ডাক শুনবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।” শতবর্ষী দাদিও আজও কান্নায় ভাসেন।
বিয়ের মাত্র এক বছর তিন মাস পরই বিধবা হওয়া মিম জানান, “জীবনের সব আনন্দ হারিয়ে ফেলেছি। মেয়েকে মানুষ করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।” এবছর তিনি ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নিহতদের স্বজনরা সরকারের কাছে দাবি করেছেন, মিমের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা হোক, যাতে রনির স্বপ্নপূরণ হয়। সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন তারা।
জসিম ও রনির পরিবারে ঈদ বা কোরবানির আনন্দ আর নেই। শুধু চোখের জল আর না ফেরার দেশে চলে যাওয়া দুই প্রিয় মুখের স্মৃতি নিয়েই চলছে জীবন।