পূর্বধলায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি- নেত্রকোনা
প্রকাশিত: রবিবার ৭ই মে ২০২৩ ১০:১৯ অপরাহ্ন
পূর্বধলায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাপাশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।


    বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কাপাশিয়া গ্রামের মরহুম ফজলুল হকের পুত্র মোঃ কামরুল হাসান গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বারাবরে প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। 


   অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আমার পিতা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জমি দাতা মোঃ ফজলুল হক এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে ১.২০ একর নিজের পৈত্রিক সম্পত্তিতে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মোঃ কফিল উদ্দিন খানকে প্রধান শিক্ষক ও আরো ৬ জন শিক্ষক, ১ জন অফিস সহকারী ও ২ জন পিয়ন নিয়োগ প্রদান করেন। ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়টি মাউশি কর্তৃক নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং ১৯৯৯ সালে এমপিও ভূক্ত হয়। ২০০৪ সালে প্রধান শিক্ষক তার স্ত্রী কানিজ উম্মে ফাতেমাকে কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে সহকারী শিক্ষক হতে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ও যোগদান করায়। কানিজ উম্মে ফাতেমা সহকারী শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করলেও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি এমপিও ভূক্ত না হওয়ায় তিনি নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সহকারী শিক্ষকের বেতন ভাতাদি উত্তোলন করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। ২০০৯ সালে ফজলুল হক পূনরায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন। ২০১১ সালে ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি গঠন করার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আদালতে ১১৬/২০১১ অন্য প্রকার মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য ফজলুল হক মৃত্যুবরণ করেন।  আদালতে মামলার কারণে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোন কমিটি ছিল না। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিও ভূক্ত হওয়ার পর পরই প্রধান শিক্ষক আদালতের মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। 


     বিদ্যালয়ের সুচতুর প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন খান ২০১৯ সালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল বারীকে ম্যানেজ করে শিক্ষক নিয়োগে অবৈধ বাণিজ্যে মেতে উঠে। প্রথমে অনিয়মিত ও অখ্যাত পত্রিকায় (বেক ডেইটে) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে ডিজির প্রতিনিধির ডিমান্ড অর্ডার (ডি.ও) এর স্বাক্ষর জাল করে সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফজলুল হকের মৃত্যুর তিন মাস পর তাকে জীবিত উপস্থাপন করে ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে জুলাই পর্যন্ত পর পর ৫টি সভা, স্বাক্ষাৎকার বোর্ড, নিয়োগ বোর্ডর সিদ্ধান্ত ও নিয়োগপত্র প্রদানের সভার রেজুলেশন দেখিয়ে এবং সকলের স্বাক্ষর জাল করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে লিটন মিয়া ও কৃষি বিষয়ক শিক্ষক হিসেবে মোস্তাক আহমেদকে নিয়োগ প্রদান করেন। 


প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন খান তার মৃত পিতা ফয়েজ উদ্দিন খানকে মৃত্যুর সাড়ে তিন বছর পর উক্ত কমিটির একজন সদস্য হিসেবে উপস্থিত দেখিয়েছে। উল্লেখ্য তিনি ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রধান শিক্ষক ২০২০ সালে আবারো শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করে ব্যবসা শিক্ষা পদে আনোয়ার হোসেনকে নিয়োগ প্রদান করেন। ২০১৯/২০ অর্থ বছরে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী কানিজ উম্মে ফাতেমা সহকারী শিক্ষকের স্কেল প্রদানের আবেদন করলে মাউশি ২০০৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক পদের অবৈধ উত্তোলনকৃত সমস্ত টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।


   কামরুল হাসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে সরেজমিনে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।   

             

  পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স গত বছরের ১ লা নভেম্বর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলামকে আহবায়ক করে সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মহিবুল্লাহ্, সহকারী প্রোগ্রামার আইসিটি মোঃ রফিকুল ইসলাম, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ খায়রুল হাসান মল্লিক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আলমকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করে সরেজমিনে তদন্ত করার নির্দেশ প্রদান করেন। তদন্ত কমিটি দীর্ঘদিন সরেজমিনে তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রতিবেদন পেশ করেন। 


   এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহবায়ক মোঃ শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বাদীর আনীত অভিযোগ সমূহ সত্য বলে তদন্ত কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়েছে বলে জানান।


   পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স-এর সাথে রবিবার যোগাযোগ করলে তিনি তদন্ত কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি জেলা প্রশাসন বরাবরে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রতিবেদন দেখে জেলা প্রশাসন পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।