কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের উজান ঝগড়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে পঞ্চম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীকে ‘যৌন হয়রানির’ অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন।
গত ৪ এপ্রিল ‘যৌন হয়রানির’ ঘটনা ফাঁস হলে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল আলম ২০১৮ সাল থেকে উজান ঝগড়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী দাবি করে, ‘হেড স্যার পানি আনার কথা বলে আমাকে লাইব্রেরির মধ্যে নিয়া গেইছে। নিয়া যায়া গাত হাত দিছে।’ ক্লাসের অনেকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও জানায় সে।
ওই শিক্ষার্থীর নানি জানান, তার বাড়িতে থেকে নাতনি পড়াশোনা করে। গত ৪ এপ্রিল দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান আলম পানি আনার কথা বলে তার নাতনিকে আলাদা কক্ষে ডেকে নেন। পানি নিয়ে গেলে শিক্ষক তার শরীরে হাত দেন এবং অশালীন কথাবার্তা বলেন। এ ঘটনা কাউকে জানাতে নিষেধও করেন। এ সময় কক্ষ থেকে দৌড় দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে সে বাড়িতে গিয়ে তার নানিকে বিষয়টি জানায়।
তিনি বলেন, ‘পরে আমি আতাউর চাচাক (বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আতাউর রহমান) বিষয়টা জানাইছি। অহন আমার নাতনি স্কুলে যাইতে চাইতাছে না। আমি ওই মাস্টারের বিচার চাই। আইজগা আমার নাতনিক এমন করছে, কাইলকা আর একজনেক করবে।’ পরে ওই শিক্ষার্থীকে অন্য এলাকায় তার বাবার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আতাউর রহমান বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের ভয়ে স্কুল যাওয়া থেকে বিরত আছে।’ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বলে জানান পরিচালনা কমিটির এই সদস্য। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক আশরাফুল আলম বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলে এসেছিলেন। আমি মানসিকভাবে খুব খারাপ অবস্থায় আছি।’ এরপরই তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে অভিযোগের বিষয় তদন্ত করতে শনিবার ওই বিদ্যালয়ে যান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল করিম। তারা প্রাথমিক তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল করিমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। মূল ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন স্কুলে আসছে না। তবে তার (ভুক্তভোগীর) সহপাঠীসহ অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, প্রধান শিক্ষকের সমস্যা রয়েছে। আমার কাছেও মনে হয়েছে তার (প্রধান শিক্ষকের) বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে।’
তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেছি প্রতিবেদন জমা দিতে। আগামীকাল বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।’
প্রধান শিক্ষককে বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘বদলি শাস্তি নয়। বদলি হলে অন্য স্কুলে গিয়েও একই কাজ করতে পারেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।