বর্তমানে কোন বৃহৎ বা ছোট কর্মসূচি ঘোষণার জন্য সংবাদ সম্মেলন করা হর-হামেশাই চোখে পড়ে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর প্রান্তরে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার আগে কি কোন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তারা!
রাজদরবারের সিংহাসনের মসনদে বসে আছেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তাঁর দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে অন্যতম বিশ^স্ত সেনাপতি মোহনলাল ও মিরমদন। মাঝে তাঁর স্ত্রী লুৎফুন্নেছা। সিরাজউদৌলার ডান দিকে বসে আছেন জগৎশেঠ, রাজবল্লভ ও রায়দুর্লভ। আর বামদিকে প্রথমে বসে আছেন ইংরেজ দরবার কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ, ঘসেটি বেগম, মীর জাফর।
দেখে মনে হচ্ছে ১৭৫৬ সালে বসা সেই রাজদরবার। যেখানে সিংহাসনে বসেছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। এ যেন পুরোই রাজদরবার। যেখানে রাজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখানে ডেকে পাঠিয়েছেন সাংবাদিকদের। এমনই এক ব্যতিক্রমী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলো রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগ। শুক্রবার বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের নাট্যকলা বিভাগের থিয়েটার রুমে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিরাজউদ্দৌলা সবাইকে পড়ে শোনাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম। সিরাজউদ্দৌলার অভিনয়ে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৃধা সাকিব জানান, সিকান্দার আবু জাফরের ‘সিরাজউদ্দৌলা’ অবলম্বনে দুই দিনব্যাপী প্রদর্শিত হবে অন্তর্বর্তী যাত্রাপালা ‘পলাশী পুরাণ’। নাট্যকলা বিভাগের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল চত্বরে আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারী যাত্রাপালাটি ম স্থ হবে।
এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি রহমান রাজু বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা যে গতানুগতিক সংবাদ সম্মেলন করি তা থেকে বেরিয়ে এসে যুগের দাবির সাথে সংবাদ সম্মেলনগুলো একটু ভিন্ন আঙ্গিকে করা উচিৎ। যেমনটি আমি নাটককে যাত্রাপালাতে এনেছি। যেমনটি প্রেক্ষাগৃহ বাদ দিয়ে মাঠে যাত্রাপালার আয়োজন করেছি জনতার জন্য। সেজন্য আমার মনে হয়েছে সংবাদ সম্মেলন বরাবরই যেরকম করে হয় ওই গতানুগতিকতা বাইরে এসে ভিন্ন রকম হলে তাতে শিল্পীরুপটি ফুটে ওঠে।
পলাশী পুরাণ যাত্রাপালার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিরাজউদ্দৌলা মূলত একটা নাটক। এটাকে যাত্রাপালার আঙ্গিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তার কারণ আমাদের যে শেকড় সন্ধানী যাত্রাপালা তা নির্বাসিত প্রায়। সেটাকে পুনঃরুদ্ধারের প্রচেষ্টা এবং মুজিববর্ষে জাতীয় চেতনাকে স্মরণ করা। এই রকম জাতীয় নায়কদের সিরাজকে স্মরণ করে ইতিহাসকে ফিরে দেখা ও তার মূল্যায়ণ করা। এই দুটো কারণে পলাশী পুরাণ নাম দিয়ে যাত্রাপালার আয়োজন করার চেষ্টা করেছি।
তিনি আরো বলেন, যাত্রাপালা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেই যাত্রাপালাকে ফিরিয়ে আনতে পারি সেই জন্য এই আয়োজন। এতে শিশু, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধা সবাই যাতে এই যাত্রাপালা দেখতে পারে জায়গায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভাগের ১৮তম ব্যাচের বার্ষিক প্রযোজনার অংশ হিসেবে ও ‘মুজিব শতবর্ষ’ কে নিবেদন করে ম ায়িত হবে যাত্রাপালাটি। যাত্রার কনসার্ট শুরু হবে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়। পালা শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।
এই যাত্রাপালার জন্য তিন ধরনের টিকিট ছাড়া হয়েছে ‘আরামকেদারা’। বিনিময় মূল্যের জায়গায় লেখা হয়েছে ‘টাকা শ পাাঁচেক’। দ্বিতীয় সারির টিকিট ‘সাধারণ কেদারা’ এর বিনিময় মূল্য ‘টাকা শ খানেক’। আর যারা মাটিতে বসে এ যাত্রাপালা উপভোগ করবেন তাদের টিকিটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলার মাটি’। এর বিনিময় মূল্য ত্রিশ টাকা।
রাবি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রাজশাহী জেলার প্রশাসক প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ দর্শক হিসেবে যাত্রাপালাটি উপভোগ করার জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কৌশিক সরকার ও সুখন সরকার।
এছাড়াও নাট্যমে ছিলেন জগৎশেঠের চরিত্রে বৃষ্টি বশাক, রাজবল্লভের চরিত্রে অন্তরা দাস, রায়দুর্লভ চরিত্রে জান্নাতুল ফেরদাউস, রবার্ট ক্লাইভ চরিত্রে আকিব আব্দুল্লাহ, ঘসেটি বেগম মৃত্তকা আবেদীন, মীর জাফর দিভস তরকা।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।