অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে চারটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বুধবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন জমা দেন সংশ্লিষ্ট কমিশন প্রধানরা। জমা দেওয়া কমিশনগুলো হলো- নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন জানুয়ারির শেষ দিকে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানানো হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে একক ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ক্ষমতার ভারসাম্য আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাব এসেছে। নিম্নকক্ষে ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। উচ্চকক্ষে থাকবে ১০৫টি আসন এবং এটি নির্বাচিত হবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে। দুই কক্ষ মিলে সংসদের মোট আসন হবে ৫০৫টি।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পুলিশ বাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে পুলিশকে ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত রাখা এবং নিয়োগ, পদোন্নতি ও নজরদারিতে স্বচ্ছতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের অপব্যবহার রোধে সুপারিশ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সংস্কারে বিদ্যমান আইন ও আচরণবিধি পরিবর্তনের পাশাপাশি কঠোর তদারকি ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিলের প্রস্তাব এসেছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থার প্রবর্তনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে। প্রথমত, কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান আইনের সীমাবদ্ধতা দূর করে দুদকের ক্ষমতা পুনর্বহালের প্রস্তাব করা হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এনবিআর, বিএফআইইউ, সিআইডি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি নিরসনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, এই প্রতিবেদনগুলো জাতীয় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এগুলো জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দেবে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, এই প্রতিবেদনগুলো দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে কাজ করবে। সংবিধান থেকে পুলিশের ভূমিকা, নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা—সবকিছুতেই স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
এটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি ইতিহাসের একটি অংশ বলে অভিহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, জনগণের মতামত নিয়ে এ প্রতিবেদনগুলো বাস্তবায়নের জন্য আলোচনা শুরু হবে। এ পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগোবে সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।