রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ রাখা বা অপসারণের দাবিতে আয়োজিত দুই পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুরে এই ঘটনার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি এবং হামলা হয়, যার ফলে অন্তত ১২ জন আহত হন।
‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ নামের একটি সংগঠন পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে এই শব্দ ব্যবহার বন্ধ করা, সংশ্লিষ্টদের শাস্তি এবং বাঙালিদের বাংলাদেশের একমাত্র আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া। অন্যদিকে, ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ পুনর্বহালের দাবিতে সেখানে কর্মসূচি পালন করে।
সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত ছিল, তবে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি একই সময়ে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করে। দুই পক্ষের অবস্থানের ফলে প্রথমে স্লোগান পাল্টাপাল্টি এবং পরে হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও সংঘর্ষ পুরোপুরি থামাতে ব্যর্থ হয়।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ধনজেতরা, অন্তত ধামাই, ফুটন্ত চাকমা, রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, এবং ডিবিসি টিভির সাংবাদিক জুয়েল মারাকসহ বেশ কয়েকজন রয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য বলে জানা গেছে।
স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার বলেন, তাদের কর্মসূচি চলাকালে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। এতে তাদের ১৪-১৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খিসা অভিযোগ করেন, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির সদস্যরা লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন এবং তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালান।
নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ যুক্ত একটি গ্রাফিতি নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির দাবির প্রেক্ষিতে সরকার সেটি সরিয়ে নেয়। তবে আদিবাসী ছাত্র-জনতা এই গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, এই শব্দ বাদ দেওয়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য অপমানজনক।
সংঘর্ষ চলাকালে দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিপেটা করে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়। স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির সদস্যরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরের দিকে সরে যান, আর সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
আদিবাসী ফোরাম এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সংঘর্ষের কারণে মতিঝিল এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দুই পক্ষের অবস্থান নিয়ে উত্তাপ রয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।