রাত হলেই থানায় বসে যুবলীগ পুলিশের কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৪ অপরাহ্ন
রাত হলেই থানায় বসে যুবলীগ পুলিশের কোর্ট

ঢাকা শহরে প্রায় ২ কোটি লোকের বসবাস। নানাবিধ সমস্যা আর অপ্রতুলতার মধ্যে দিয়ে জনগণ বসবাস করেন। স্বাধীনতার পর থেকে নতুন কোন শহর গঠিত হয়নি ঢাকার মতো। তাই দল বেধে সবাই ঢাকার দিকে ছুটে কাজের প্রয়াসে। সব ধরনের অফিস আদালত পরিচালিত হয় এই ঢাকা থেকে আর তাই লোক সমাগম ও বেশি। বেশি লোক থাকার সুবিধাটা নিয়ে রাজনীতিটাও বেশ করা যায়। বর্তমান সরকার পর পর ৩ বার ক্ষমতায় আছেন। জনগণের মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু তাতে ভাটা পরে যাচ্ছে কিছু দলীয় নেতা-কর্মীর অপকর্মে এবং তারা এতোটা বেপরোয়া যে তা ভাষায় প্রকাশ যোগ্য না। 

তবে সরকারের সকল কর্মকর্তা বা দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর বা আমলনামার খোঁজ নিয়ে থাকেন দলীয় প্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি এসব যেনে চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন দেশব্যাপী। বেশ কিছু নেতাকে আটক করেছেন ইতোমধ্যে যারা রাজনীতির নামে জনগণের টাকা নিজের পকেটে ভরেছেন তাদের। দলীয় কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেপরোয়া যুবলীগের নামধারী নেতা কর্মীরা। সারা ঢাকাতে দেখা যায় স্থানীয় পর্যায়ে যত অন্যায় বা অপকর্ম হয় তার নেতৃত্ব দেন স্থানীয় যুবলীগের নেতার পরিচয় দিয়ে। মাদক, চাঁদাবাজি, ফুটপাত দখল করে তা ভাড়া দিয়ে প্রতিদিন টাকা তোলেন। ঢাকার বস্তিগুলোতে নিজেরা ঘর তুলে তা ভাড়া দিয়ে মাদক বা পতিতা বৃত্তি চালু করেন। এসব অভিযোগ যুবলীগের বিরুদ্ধে।

তবে এর মাঝে বিশেষ একটি অভিযোগ রয়েছে, আর তা হলো রাতে ঢাকার থানা গুলোতে বসে বিশেষ কোর্ট। এই কোর্ট নিজে পরিচালনা করেন কিছু কিছু থানার ওসি, আর কিছু কিছু থানাতে এসআই যারা থাকেন তারা। তবে কোর্টের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় যুবলীগ নামধারী নেতা বা কর্মীরা। এই অভিযোগের গভীরে গেলে দেখা যায় যে, ঢাকার প্রতিটি থানার ২-৩ জন এসআই বা এএসআই থাকেন যারা চরম অসৎ এবং যাদের সারা দিনের কাজ হচ্ছে কি করে মানুষকে বিপদে ফেলানো যায় এবং বিপদে ফেলে টাকা নেওয়াটাই মূল উদ্দেশ্য। যেমন জনাব আকাশ সাহেব (ছদ্মনাম) ১০০০০ টাকা পাবেন রহিম সাহেবের কাছে। কোন কারণে এই টাকাটা তুলতে বা দিতে পারছেন না উভয় পক্ষ। এখন এই সংবাদটি যাবে প্রথমে স্থানীয় যুবলীগ নামধারী কোন কোন কর্মীর কাছে, তিনি জানাবেন তার থানা সভাপতির কাছে বা সাধারন সম্পাদকের কাছে। এরপর তারা সংশ্লিষ্ট থানার ওই অসৎ এসআই বা এএসআইকে ফোন করে বিষয়টি জানাবেন। সংশ্লিষ্ট ওই পুলিশ এবার অভিযানে যাবেন। প্রথমে মুল ভিকটিমের বাসায় যাবে এবং বাসার সবাইকে একটু রাগ দেখাবেন যে, জনাব অমুক তমুকের থেকে অনেক পরিমান টাকা নিয়েছেন তাই তাকে বলবেন ওসি স্যার এর সাথে দেখা করতে।

এরপর ওসি সাহেবের সাথে দেখা করার পর তিনি বলবেন রাতে আসুন, রাতে সমাধান করা হবে। আর জনাব (ছদ্মনাম) এসআই মমিনুল আপনি একটু বিষয়টা ভালো ভাবে দেখুন। এভাবে জনাব রহিমের মনে একটা আতঙ্ক ধরিয়ে দিবেন যাতে তিনি অস্বস্তিতে থাকেন। এরপর রাত ৯-১০ টায় বসে ওই বিশেষ কোর্ট। যে কোর্টের জজ হয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বা ওসি যাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সেই এসআই। আর উকিল থাকেন যুবলীগের সভাপতি বা সাধারন সম্পাদক। যদি টাকার পরিমান বেশি হয় তাহলে যুবলীগের সভাপতি বা সাধারন সম্পাদক নিজেরাই থাকেন আর যদি টাকার পরিমান কম হয় তাহলে তার কর্মী যারা ভাইলীগ নামে পরিচিত তারা থাকেন।

মজার বিষয়টা হচ্ছে্‌, যদি টাকার পরিমান হয় ১০০০০ টাকা, সেটা থানাতে গেলে হয়ে যায় ২১০০০০ টাকা। কেন এত টাকা বেড়ে গেলো?? তার কারন এটা হচ্ছে ভিকটিমকে একটা প্রেশারে রাখা। মানে যতটা তোলা যায় আর কি!! প্রথম দিনের কোর্টে এই বিষয় সমাধানের চেষ্টা হয়। যদি ভিকটিম টাকা দিতে পারে  তবে ভালো। আর যদি না দিতে পারে তাহলে ওসি বা এসআই আগামীকাল রাতের মধ্যে টাকা নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য আসতে বলেন। এবার পরের দিনের দায়িত্ব প্রাপ্ত এসআই এবার ভিকটিমের বাসায় যাবেন। গিয়ে বলবেন টাকাটা দিয়ে দেন জামেলা করে কি লাভ বলুন আর যদি না দিতে চান তাহলে আমরা কোন একটা বিশেষ মামলাতে ভরে দিবো আর নিচে নামলে তো যুবলীগের মাইর আছেই!! কি বলেন?? এবার মুল কোর্টের রাতে সমাধান হয় এমন, 'আগামী ৭ দিনের মধ্যে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। তবে আজ ৫০০০০ টাকা এখন দিয়ে দিবেন। এবং ওই ভিকটিম এই টাকা দিতে বাধ্য হন। আর এভাবেই প্রতিদিন কোন না কোন কোর্ট পরিচালিত করেন থানা আর যুবলীগের নেতারা মিলেমিশে। 

একটা বিশ্লেষণ বা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কেন এই অপরাধ বা অন্যায়ের নেতৃত্ব দেন থানার এসআই বা এএসআইরা। এর মুল কারন দ্রুত ধনী হবার প্রবনতা এবং এক থানা বা একই এলাকাতে দীর্ঘ দিন ধরে পোস্টিং থাকা। যেমন, রাজধানীর মিরপুর মডেলের এক এসআই ২ বছর থাকলেন। তিনি এবার যাচ্ছেন রূপনগর থানাতে এবার কিছুদিন পরে যাচ্ছেন মিরপুর পল্লবী থানাতে। দেখা যায় এক এসআই ৫-৭ বছর ধরে মিরপুরের থানাগুলরে ঘুরে ফিরে পোস্টিং নিচ্ছেন তার বসদের মনোরঞ্জন করে বা ঘুষ প্রদান করে। এতে এই ধরনের মিলেমিশে করা অপকর্ম বাড়ছে। এখন সারাদেশব্যাপী একটি শুদ্ধি অভিযান চলছে এই অভিযানে থানাকে সম্পূর্ণভাবে সেবার কেন্দ্র বানাতে এই বিষয়গুলোতে নজর দিবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এটাই আসা করেন জনগণ।