সচেতনতা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ১৯শে আগস্ট ২০২৪ ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন
সচেতনতা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য

আরবের জনমানবহীন ফলফসলহীন এক অনাবাদ অঞ্চলে স্বীয় স্ত্রী হাজেরা আর শিশুপুত্র ইসমাঈলকে মহান আল্লাহর নির্দেশে রেখে গিয়েছিলেন নবী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। পরবর্তীতে পুত্র ইসমাঈলও নবুওতপ্রাপ্ত হন। পিতা-পুত্র দু’জনে মিলে নির্মাণ করেন মহান প্রভুর ঘর, পবিত্র কাবা শরীফ। শুরু হয় হজ্বের ধারা। পবিত্র কুরআনের কত সুন্দর বর্ণনা : (হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে মহান আল্লাহর নির্দেশ), তুমি মানুষের মাঝে হজ্বের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট চলে আসবে হেঁটে হেঁটে, দূর-দূরান্ত থেকে গভীর পথ মাড়িয়ে আগত শীর্ণকায় উটের পিঠে চড়ে। (সূরা হজ্ব : ২৭)।


নবী ইবরাহীম (আ.)-এর ছেলেবেলায় স্বগোত্রের সঙ্গে বিতর্ক হয়েছিল মূর্তির উপাসনা নিয়ে। তাদের অবর্তমানে মূর্তিশালায় ঢুকে মূর্তি গুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথায় কুলাতে না পেরে তারা সোজা তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহর কুদরতে তিনি সেদিন জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকেও নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। পবিত্র কুরআনে এ ঘটনাও বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। এই নবীর হাতেই নির্মিত পবিত্র কাবাঘর। সেই কাবাঘরে মানুষ হজ্ব করতে আসে।



পবিত্র এই ঘর তওয়াফ করে। কিন্তু কালের আবর্তনে এই কাবাঘরের ভেতরেই স্থান করে নেয় তিনশ ষাটটি মূর্তি। যে মূর্তির উপাসনা নিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন স্বজাতির সঙ্গে, তাঁরই হাতে নির্মিত পবিত্র ঘরটিতেও একটা সময় স্থান করে নিল এই মূর্তির দল। পৃথিবী জুড়ে ‘আল্লাহর ঘর’ বলে পরিচিত এই ঘরখানি। অথচ এই ঘরের পড়শিরাই আল্লাহর দ্বীন ছেড়ে মূর্তিপূজায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত! প্রিয় নবীজী (সা.)-এর এ পৃথিবীতে আগমনকালে আরবসমাজ এ মূর্তিপূজার কৃষ্ণ আবরণে এভাবেই আচ্ছাদিত ছিল।


জানা কথা, ইসলাম প্রথমেই মানুষকে আহ্বান জানায় সৃষ্টির উপাসনা ছেড়ে একমাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহর বন্দেগি ও দাসত্ব গ্রহণ করতে। তাই মরু আরবে ইসলামের ঘোষণাই ছিল মূর্তিপূজার মূলে কুঠারাঘাত। অথচ প্রিয় নবীজী (সা.)-এর দাওয়াত গ্রহণ করে যারা মূর্তিপূজার অন্ধকার গলি থেকে উঠে আসছিলেন তাওহীদের আলোকিত রাজপথে, তাদেরকেই পবিত্র কুরআনে এ বলে সতর্ক করে দেয়া হলো : আল্লাহকে ছাড়া যাদের তারা ডাকে, তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না! (সূরা আনআম : ১০৮)। সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে এর রহস্য : ‘এমন করলে তারাও যে শত্রুতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে!’ (প্রাগুক্ত)।



কোনো জটিল সমীকরণ নয়। যিনি আল্লাহবিশ্বাসী মুমিন, তার কোনো কর্মের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ যদি কেউ আল্লাহকে গালি দিয়ে বসে, তাহলে এর দায় তো স্বাভাবিকভাবেই সে মুমিনের ওপরও বর্তায়। দুর্ভাগ্যবশত যদি কেউ আল্লাহকে গালি দেয় তাহলে সে যেমন অপরাধী, কারও কথা বা কাজের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ যদি এমনটি ঘটে তাহলে সেও এর দায় এড়াতে পারে না। ইসলাম তার অনুসারীদের এভাবেই সচেতনতা শিক্ষা দেয়।


সচেতনতার আরেকটি রূপও এখানে লক্ষণীয়। স্বভাবধর্ম ইসলামে সবকিছুতেই মধ্যপন্থাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নবীজী (সা.)-এর ভাষ্য দেখুন : মধ্যপন্থা মেনে যে কর্ম করা হয় সেটাই শ্রেষ্ঠ। (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৬০৪)।



উপরোক্ত বিষয়েও সযত্নে রক্ষিত হয়েছে এ মধ্যপন্থার শিক্ষা। মূর্তিপূজা আর ইসলাম সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুটি বিষয়। এ দু’য়ের মাঝে কোনোরকম সমন্বয় কিংবা মূর্তিপূজাকে ছাড় দেয়ার অবকাশ ইসলামে নেই। ইসলামের মৌলিক যে দাওয়াত, এক আল্লাহকে মাবুদ ও উপাস্য হিসেবে মেনে নেয়ার আহ্বান, এটিই তো শিরিক ও মূর্তিপূজাকে গুড়িয়ে দেয়।


এ থেকে কেউ যেন আবার কাফেরদের দেবতা বা মূর্তিগুলোকে গালমন্দ করাকে ‘ভালো কাজ’ না বানিয়ে ফেলে, সেজন্যে সতর্ক করা হয়েছে। একদিকে মূর্তিপূজার বিপরীতে ইসলামের শাশ্বত বাণীর প্রচার এবং সৃষ্টির উপাসনা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বানের আদেশ, সঙ্গে সঙ্গে পরিণতিতে ইসলাম আক্রান্ত হতে পারে এমন সব কাজে নিষেধাজ্ঞা, এ সচেতনতাই ইসলামের সৌন্দর্য।


শুধু এই একটি ক্ষেত্রই নয়, ইসলামের সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে এই সচেতনতার শিক্ষা। দ্বীনী ও পরকালীন বিষয়ে তো বটেই, নিরেট পার্থিব বিষয়েও ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় এই সচেতনতার।