প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৯
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে উত্তাল দেশ। তখন এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল ইন্টারনেট ও ফেসবুক। উত্তাল জুলাইয়ের শেষের দিকে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি নির্মাণাধীন ভবনের রড ধরে ঝুলে থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টারত এক তরুণকে দু’জন পুলিশ গুলি ছুড়ছেন। কয়েক রাউন্ড গুলি চালানোর পর পুলিশ চলে গেলেও সেই তরুণ সেখানেই ঝুঁলে ছিলেন। সে দৃশ্য তোলপাড় হয় নেট দুনিয়ায়।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ঝড় শুরু হয়। আন্দোলন বেগবান হয়। যারই ধারাবাহিকতায় পতন ঘটে স্বৈরচারি সরকারের। কিন্তু সেই তরুণের খবর আর কারো নেওয়া হয়নি। সেদিন হয়তো সবাই ধরেই নিয়েছে পুলিশের গুলিতে ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য সেদিন পুলিশের ছয় রাউন্ড গুলি খেয়েও প্রাণে বেঁচে ফেরেন সেই তরুণ। তার নাম আমির হোসেন (১৮)। ঘটনা গত ১৯ জুলাইয়ের। সেদিন কাজ থেকে ফেরার পথে সংঘর্ষের মুখে পড়েন আমির। আত্মরক্ষার্থে রামপুর থানার পাশের ওই নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নেন। এক পর্যায় ভবনে একটি রডের সাথে ঝুলে থাকেন। সেই ভবনে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আমিরকে লক্ষ্য করে গুলি করেন অন্তত দুই জন পুলিশ সদস্য।
কীভাবে সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন আমির? কিংবা কীভাবেই বা গুলির জখম নিয়ে নেমে এসেছিলেন তিনি? এসব প্রশ্ন এতদিন কেউ করেনি। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস পর গুলি খাওয়া আমিরকে খুঁজে পাই এবং বিস্তৃত তুলে ধরছি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্জারামপুর থানার দুলারামপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক বিল্লাল মিয়ার ছেলে আমির হোসেন (১৮)। চার ভাই বোনের মধ্যে আমির তৃতীয়। পেশায় কফি শপের কর্মী আমির রাজধানীর রামপুরা থানার মেরাদিয়া এলাকায় বড় ভাই নয়ন মিয়ার সঙ্গে বসবাস করেন। কিডনি জটিলতায় মা ইয়াসমিন পাঁচ বছর আগে মারা যান। এরপর আমির ও তার ছোট বোনের আশ্রয় হয় ফুফু নাসিমা বেগমের কাছে। মা মারা যাওয়ার পরে বাবা বিল্লাল অন্যত্র বিয়ে করেন। বাড্ডা থানার আফতাব নগর এলাকার একটি কফিশপে কাজ করেন আমির।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে আমিরের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মেরাদিয়া এলাকার একটি টিনশেড বাসার বিছানায় শুয়ে আছেন। পাশে বসা তার ফুফু নাসিমা। মা না থাকায় অসুস্থ আমিরের সেবা করছেন নাসিমা। আমিরের দু্ই পা ও রানে গুলি লেগেছে। বাম পায়ে একটি গুলি পায়ের পাতায় লেগে অপর পাস দিয়ে বের হয়ে যায়। বাম রানে একটি গুলি ঢুকে কোমরের পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। ডান পায়েও একইভাবে হাঁটু ও রানে গুলি লেগে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে বের হয়ে যায়। ফলে হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন এই তরুণ। ডান পায়ে শক্তি পাচ্ছেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পরে বর্তমানে বাসায় শুয়ে থাকেন। আর্থিক অনটনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেন না এই তরুণ।
বিকেলের ঘটনার বিষয়ে আমির বলেন, আমি আন্দোলনে যাই নি। আফতাব নগরের একটি কফি শপে কাজ করি। কাজ শেষে বাসা ফেরার পথে মেরাদিয়া আসার পরেই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যাই। তখন ওই ভবনের চার তলায় গিয়ে লুকাই। পুলিশ আমাকে দেখে ফেলায় রড ধরে ঝুলে থেকে পুলিশের চোখ এড়ানোর চেষ্টা করি। ওই অবস্থায় পুলিশ আমাকে নিচে লাফ দিতে বলে। লাফ না দেওয়ায় দুই পুলিশ আমাকে গুলি করতে থাকে। চার তলার ছাদ থেকে যে গুলিগুলো করেছে সেগুলো আমার শরীরে লাগে নি। পরে তিন তলা থেকে একজন পুলিশ এসে গুলি করতে থাকে। তার ছোড়া ছয় রাউন্ড গুলি আমার শরীরে লাগে। কিন্তু তার পরেও কিছু সময় ঝুঁলে ছিলাম। পরে পুলিশ চলে গেলে লাফ দিয়ে তিন তলায় গিয়ে পড়ি। সেখানেই কয়েক ঘণ্টা পড়েছিলাম। এরপর ফেমাস হাসপাতালের দুজন ডাক্তারসহ কয়েকজন লোক আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা আমির আরও বলেন, আমি বারবার বলেছি, আমি আন্দোলনকারী না। পুলিশ বিশ্বাস করে নাই। তারা আমাকে চার তলা থেকে বারবার লাফ দিতে বলেছে। আমি লাফ না দেওয়ায় গুলি করে। তারা চাইছিল আমি যেন লাফ দিয়ে মারা যাই।সে দিন আমিরকে উদ্ধার করেছিলেন ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ফেমাস স্পেশালাইজড হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক ও রিসিপশনিস্ট মিমি