প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১:২৪
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ফের অস্থির পেঁয়াজের বাজার। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। রাতের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে কেজি প্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। কেউ কেউ ২১০ টাকাও দাম হাঁকছেন। আবার অনেক ব্যবসায়ারি দোকানে পেয়াজ মজুদ রেখে পেয়াজ বিক্রি থেকে বিরত রয়েছেন। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজার সরজমিন ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল থেকেই শহরের বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কেজিপ্রতি ৯০-১০০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম গিয়ে ওঠেছে ১৮০-২০০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। আর বিক্রেতারা বলছেন পাইকাররা দেশি পেঁয়াজ বিক্রিই করছেন না।
এদিকে রাতারাতি পেঁয়াজের এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। বাজারে এসে অনেকে পেঁয়াজ না কিনে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে গলাকাটা দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কালিঘাট রোডে কথা হয় ক্রেতা রিপন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ১২০ টাকা করে। আজকে এসে দেখি সেটা ডাবল হয়ে গেছে। শুক্রবারও না কি ১৪০ টাকা কেজি ছিল। রাতের মধ্যেই বেড়ে গেলো ১২০ টাকা। এটা কেমন কথা? আমরার মতো মধ্যভিত্তের সংসার কেমন চলবে? ক্রেতা রিপনের বক্তব্য অনুযায়ী, তার কাছে দেশি পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা চাওয়া হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল শহরের নতুন বাজার রোডের জসিম স্টোরের সত্ত্বাধিকারী বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারে আমাদের কেনাই বেশি পড়ছে। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাবে পড়েছে। গতকাল সেন্ট্রাল রোড থেকে থেকে বহু কষ্টে এলসির (ভারতীয়) ১ বস্ত্ পেঁয়াজ এনেছি। আমি পাইকারিতে ১৪০টা কেজি দরে কিনেছি। আনতে গাড়ি ভাড়াও লেগেছে। এখন এখন কেনা দামের চেয়ে কিছু বেশি দিয়ে না বেচলে তো আমার লস।
শহরের সেন্ট্রাল রোডের সোনালী স্টোরের ম্যানেজার স্বপন রায় বলেন, পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজের মণ এখন ৮ হাজার টাকা। যা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে প্রায় দুইশ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজের মণ ৭ হাজার ২০০ টাকা। আর প্রতিকেজির দাম পড়ে ১৬০ টাকা। মূলত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণায় এ দাম বেড়েছে।
এ বিষয়ে সেন্ট্রাল রোডের পাইকারি ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বলেন, দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি নতুন পেয়াজ কিনতে পারিনি। আমার দোকানে পেয়াজ নেই, আপাতত পেয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখছি।
পোস্ট অফিস রোডের ব্যবসায়ি নিউ লোকনাথ সজল পাল বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে৷ ফলে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে দাম। কিন্তু উৎপাদন স্বাভাবিক থাকার পরও হঠাৎ কেন পেঁয়াজের বাজারে এই অস্থিরতা! জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার মূল্যেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যেই ভারত সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পোস্ট অফিস রোডের অংকিতা স্টোরের চয়ন পাল বলেন, আমি ১৮০ টাকা কেজি দরে পেয়াজ বিক্রি করছি।
পেয়াজ কিনতে আসা শেখ কামরান বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজির নিচে নেই। আর ভারতের পেঁয়াজ ১৮০ টাকা কেজি। দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ৯৫ টাকা করে। রাতের মধ্যেই বেড়ে গেল ১০৫ টাকা। এটা কেমন কথা দেশি পেঁয়াজের কেজি ২১০ টাকা চাওয়া হয়েছে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলবো! ব্যবসায়ীরা ভারতে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি এবং দেশে সরবরাহ কমে যাওয়াকে দাম বাড়ার যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন। যদিও দেশের বাজারে এখনো ভারতের বর্ধিত মূল্যের পেঁয়াজ আসেনি। অসাধু সিন্ডিকেট বিনা কারণেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন লিটন নামের এক ক্রেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, কারসাজি চক্র সব সময়ই সুযোগ খোঁজে পণ্যের দাম বাড়ানোর। তবে আমরা বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি বন্ধে অভিযান শুরু করেছি।
শনিবার সকালে শহরের সেন্ট্রাল রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে অতিরিক্ত দামে পেয়াজ বিক্রির কারণে সেন্ট্রাল রোডের মেসার্স পাল ভান্ডারকে ২০ হাজার টাকা এবং মেসার্স আমির ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ন্যায্য মূল্যে প্রাপ্তি এবং নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।