কিশোরগঞ্জে ৪০ চিকিৎসক, ৫১ নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২১শে এপ্রিল ২০২০ ১০:৪৩ অপরাহ্ন
কিশোরগঞ্জে ৪০ চিকিৎসক, ৫১ নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত

কিশোরগঞ্জ জেলায় এ পর্যন্ত ১৪২ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ৯১ জনই স্বাস্থ্য বিভাগের। তাদের মধ্যে ৪০ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স ও ৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মী। জেলায় মোট শনাক্ত হওয়া ১৪২ জনের মধ্যে এক শিশুসহ মারা গেছেন তিনজন।

সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান জানান, কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে গত শনিবার ১২৫ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। গত রোববার রাতে ৪০টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ঢাকা থেকে আসে। রিপোর্ট পাওয়া তিন উপজেলা হোসেনপুর, ভৈরব ও অষ্টগ্রামের এই ৪০ জনের মধ্যে ২৩ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ এবং বাকি ১৭ জনের নেগেটিভ আসে। পরবর্তী সময়ে বাকি ৮৫টি নমুনার মধ্যে ৮২টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এতে ৪৪ জনের পজিটিভ এবং ৩৮ জনের নেগেটিভ এসেছে। অর্থাৎ ১২২টি নমুনার মধ্যে ৬৭ জনের পজিটিভ এবং বাকি ৫৫ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এই ৬৭ জনের মধ্যে ৪৪ জন পুরুষ ও ২৩ জন নারী।

নতুন শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ভৈরব উপজেলার ২০ জনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপের ৬ চিকিৎসক ও ১০ নার্স রয়েছেন। তাড়াইলে আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে একজন চিকিৎসকসহ সবাই তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপের নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। মিঠামইন উপজেলায় ১৬ জনের মধ্যে ৬ চিকিৎসকসহ ১৫ জনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপের স্বাস্থ্যকর্মী। কটিয়াদী উপজেলায় ৯ জনের মধ্যে ৭ জন চিকিৎসকসহ সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী। ইটনা উপজেলায় ৬ জনের মধ্যে দু'জন চিকিৎসকসহ সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় তিনজনের মধ্যে মারা যাওয়া এক ব্যক্তি ছাড়া বাকি দু'জনের একজন কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এবং একজন সিনিয়র নার্স রয়েছেন।

স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) জেলা সভাপতি ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের প্রথমে নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বিকভাবে চিন্তা করা হয়নি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। শুরুতে এই কাজটি যথাযথভাবে করা হয়নি বলে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা সেবায় জড়িত সবাইকে প্রয়োজনীয় ও পরীক্ষিত পিপিএ, মাস্কসহ অন্যান্য সামগ্রী নিশ্চিত করা না হলে আমাদের বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল ওয়াহাব বাদল বলেন, চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত ৯১ জন করোনায় আক্রান্ত। ভীষণ উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বহির্বিভাগে সাধারণ রোগী এসে করোনার বিষয়টি গোপন করেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও পিপিইসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেন। তারা এক মেসে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। এভাবেই একজন থেকে অন্যজনে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, শুধু করোনা চিকিৎসক নয়, সব পর্যায়ের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করে তাদের চিকিৎসা সেবায় নামাতে হবে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব