বগুড়ায় শহরে ভিড়, ঘরে মানুষ নেই!
বগুড়ায় করোনা পরিস্থিতিতে কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যেও ঘরে থাকছে না সাধারণ মানুষ। রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে তারা। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালেও শহরের প্রধান সড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কে যানবাহন চলাচল করেছে। পাড়া-মহল্লা ও বাজারগুলোতে ছিলো স্বাভাবিক সময়ের মতোই ভিড়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনার ভয়াবহতা বগুড়ার মানুষ এখনো আচঁ করতে পারেনি। এ কারণে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হলেও কর্মহীন দরিদ্রদের সঙ্গে সাধারন মানুষও তা মানছে না।
টানা পাঁচদিন এক রকম গৃহবন্দি থাকা বগুড়া শহরবাসীর অনেকেই মঙ্গলবার সকাল থেকে হঠাৎ বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা, পার্করোড, খান্দার মোড়, শেরপুর রোড, স্টেশন রোড, কাজী নজরুল সড়ক, থানা রোড, বড়গোলা টিনপট্টি, কালীতলাসহ শহরের ছোটবড় সব সড়কেই ছিল লক্ষ্য করার মত যানবহন ও মানুষের ভিড়। বাজারগুলোতেও ছিল স্বাভাবিক সময়ের মত ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম। এছাড়াও ওষুধের দোকান, গৃহ নির্মাণের সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দোকানেও ক্রেতাদের সমাগম ছিল স্বাভাবিক।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা শুরুর সময়ের চাইতে কিছুটা শিথিল লক্ষ্য করা গেছে। শহরের এই ভিড় দেখে কেউ কেউ শঙ্কিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। অনেকে জনসমাগমের ছবি পোস্ট করে শঙ্কার বিষয়টি জানিয়েছেন। এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষের বাড়িঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে জনগনকে আরও সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ারও তাগিদ দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি কাঁচা বাজার রাজাবাজারের সামনে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের রীতিমতো ভিড় লেগে গেছে। এছাড়া ঝাউতলা ও খান মার্কেটে ওষুধের পাইকারি ও খুচরা দোকান এবং বিভিন্ন ব্যাংকগুলোতেও মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এদিন শহরের সড়কগুলোতে রিকশা-ভ্যানসহ মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের চলাচলও বেশি ছিল। ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশাও। শহরের বিভিন্ন মোড় ও সড়কে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও জনসমাগম রোধে তাদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোকজনকে বাড়িঘরে থাকতে বাধ্য করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের কড়াকড়ি বিশেষত লাঠিচার্জের ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হওয়ায় তারা খানিকটা বিব্রত। তাছাড়া পুলিশ প্রধানের পক্ষ থেকেও জনগনের সঙ্গে ভালো আচরণের নির্দেশনা দেয়ায় তারা কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। যার সুযোগ নিচ্ছেন শহরবাসী।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারিভাবে প্রথম পর্যায়ে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর মঙ্গলবার এক ঘোষনায় ছুটি বর্ধিত করে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। ছুটি বাড়ানোর অন্যতম কারণ হলো মানুষ ঘরে থাকলে ঝুঁকি কমবে। একই সঙ্গে সব বিপণী বিতান এবং গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ছুটির দিনগুলোতে লোকজনকে নিজ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
দেখা গেছে, প্রথম দিকে লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে তেমন বের হয়নি। সে সময় শুধু কিছু রিকশা-ভ্যান চালকসহ ক্ষুদ্র কিছু ব্যবসায়ীরা যাতায়ত করেছে। বেশ কয়েকটি এলাকার লোকজন জানান, এভাবে ঘরে বসে থাকতে মন চাইছে না। এছাড়া বগুড়ায় পরিস্থিতি এখও গুরুতর হয়নি। এ কারণে তারা বাইরে বের হয়েছেন।
বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদিউজ্জমান জানান, পুলিশ নমনীয়ভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে মানুষকে ঘরে পাঠাচ্ছে। কিন্তু অনেকেই সচেতন নয়। এসব মানুষকে নিয়েই এক রকম ঝুঁকি দেখা দিয়েছে এখন। শহরের ভিড় প্রসঙ্গে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, জনগণকে সচেতন করতে আমাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।