প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৪:১১
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
বাঁশ খাওয়া মানুষের প্রায় ১৪শ বছরের পুরোনো অভ্যাস। চীনের তাং বংশের লোকেরা বাঁশ খেত বলে জানা যায়। ভারত উপমহাদেশে ঠিক কবে থেকে বাঁশ খাওয়া হচ্ছে তা জানা যায় না। তবে এ বিষয়ে একটি লোককাহিনি প্রচলিত আছে।
বাঁশ পাতা খাচ্ছে খরগোশছবি : সংগৃহীত
ভারতের কোনো এক স্থানে একটি খরগোশ নাকি টানা তিন মাস বেঁচে ছিল শুধু বাঁশ খেয়ে। তাই মানুষ ভাবল- এটি খেয়ে মানুষও বাঁচতে পারবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। ভারতবর্ষে শুরু হলো বাঁশ খাওয়া। কিন্তু আস্ত বাঁশ তো আর খাওয়া যায় না। হজমে যেন সমস্যা না হয় তাই মানুষ বাঁশ থেকে কোড়ল সংগ্রহ করে খাওয়া শুরু করল।
মাটি ফুঁড়ে জন্মেছে বাঁশ কোড়লছবি : সংগৃহীত
বাঁশের মোথা থেকে শিংয়ের মতো যে অংশটি মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে থাকে সেটিকেই বলে কোড়ল। ইংরেজিতে ব্যাম্বু শুট। বাংলাদেশের কিছু আদিবাসীর মধ্যে কোড়ল খাওয়ার চল বেশি। মারমারা এটিকে বলে মহ্ই। ত্রিপুরারা ডাকে মেওয়া, চাকমারা চেনে বাচ্ছুরি নামে।
পাহাড়ি অঞ্চলে সবজি চাষপ্রতীকী ছবি
পাহাড়ি অঞ্চলে ফলন কম। জুম চাষ ছাড়া খুব বেশি সবজি মেলে না। বছরজুড়ে যে সবজি মেলে তা দিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সবজির চাহিদা পূরণ হয় না। এমনকি বর্ষাকালে সেই অর্থে শাকসবজি মেলে না সেখানে। তাই বর্ষায় পাহাড়িদের নিরামিষের জোগান দেয় বাঁশ কোড়ল। তা পাওয়া যায় মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। সমতলের বাঙালিরা সারা বছরই নানা ধরনের শাকসবজি পায়। ফলে তাদের মধ্যে কোড়ল খাওয়ার প্রচলন কম।
সেদ্ধ করা হচ্ছে কোড়লছবি : সংগৃহীত
৬ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হলে চাকু দিয়ে কেটে সংগ্রহ করা হয় বাঁশ কোড়ল। ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রাখলে এর উপরের শক্ত আবরণ আলগা হয়ে যায়। তা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশটি ছোট ছোট টুকরা করে আবারও পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। আর নরম করে খাওয়ার জন্য এক দফা সেদ্ধ করে নেন অনেকে। এভাবেই তা খাওয়ার উপযোগী হয়।
নানা ধরনের কোড়লছবি : সংগৃহীত
বরাক, মুলি, ফারুয়া, প্যাঁচা ও মিতিঙ্গা বাঁশের কোড়ল খেতে সুস্বাদু। বেশ পুষ্টিকরও। স্বাস্থ্যকর হওয়ায় চীনের লোকেরা এটিকে খাবারের রাজা বলে।
বাঁশ কোড়লের তরকারিছবি : সংগৃহীত
বাঁশ কোড়ল নিয়মিত খেলে কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। নিয়ন্ত্রণে থাকে হাঁপানি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস ও মৃগী।
কোড়লের আচারছবি : সংগৃহীত
সবজি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও আচার বানানো যায় কোড়ল দিয়ে। খাওয়া যায় মাছ, মাংস ও শুঁটকির সঙ্গেও। সালাদ ও স্যুপ করেও খায় কেউ কেউ।
খাওয়ার জন্যে উপযোগী করা হচ্ছে কোড়লছবি : সংগৃহীত
প্রতিবছর বিশ্বে ২৫০ টনেরও বেশি কোড়ল খাওয়া হয়। চাষ বেশি হয় চীনে, কিন্তু খায় বেশি জাপানিরা। এমনকি বিশ্বের ৩৭টি দেশ টিনজাত কোড়ল রপ্তানি করে।
টিনজাত ব্যাম্বু শুটছবি : সংগৃহীত
কোড়লের এই চাহিদা মেটাতে গিয়ে উজাড় হচ্ছে বাঁশঝাড়। যে পরিমাণে কাটা হচ্ছে, ততটা চাষ হচ্ছে না। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে বাঁশ কোড়লের দাম।