হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৩ অপরাহ্ন
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পত্র বা আইপি মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১৫ মার্চ এর পর থেকে এই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেওয়ায় মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১২ টাকা। অন্য দিকে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। আর এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ ও নিন্ম আয়ের মানুষ। দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন হিলি স্থলবন্দরের  আমদানিকারকরা। তাই পবিত্র রমজানে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।


সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে হিলি স্থলবন্দর এর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় ও ভারতীয় পেঁয়াজ কম বেশি সব দোকানে দেখা গেলেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১২ টাকা। বাজারে এসে হিসাব মিলাতে না পেরে বিপাকে পড়ছে সাধারণ ও নিন্ম আয়ের মানুষ।


বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা তাজুল ইসলাম তাজ বলেন, আর মাত্র দুই দিন পরে পবিত্র রমজান মাস। আর এই মাসে কম বেশি সবার পেঁয়াজ একটু প্রয়োজন হয়। তাই বাড়ির জন্য একটু বেশি করে পেঁয়াজ নিতে বাজারে আসলাম। কিন্ত বাজারে এসে হিসেব মিলাতে পারছি না। গত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক হাটের দিনে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি দাম ২২-২৩ টাকা। আর আজ সেই পেঁয়াজ দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি ৩২-৩৪ টাকা। দেশীয় পেঁয়াজ ৩২ টাকা থেকে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা। এতে আমাদের মতো সাধারণ ও নিন্ম আয়ের মানুষরা বিপাকে পড়েছে। শুনতেছি হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে না কি পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে তাই এমন দাম বেড়েছে। 


হিলি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রেতা শাকিল আহম্মেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় পেঁয়াজ ১৮-২০ টাকা কেজি পাইকারি নিয়ে ২২ থেকে ২৪ টাকা দরে দরে খুচরা বিক্রি করেছি। গত ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় আজ ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকা পাইকারি কিনলাম, এখন এসব পেঁয়াজ ৩২- ৩৪ টাকা বিক্রি করতেছি। দেশীয় পেঁয়াজ ২৮-৩০ টাকা কেজি পাইকারি কিনে ৩২-৩৪ টাকা বিক্রি করেছি। আজ সোমবার সেই পেঁয়াজ ৩৮ টাকা পাইকারি কিনে ৪০-৪২ টাকা বিক্রয় করতে হচ্ছে। আমার বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি। এতে ক্রেতার সাথে বেশি কথা বলতে হচ্ছে এবং বেচাকেনা ও কমে গেছে। 


হিলি বাজারে পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শাহাবুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত বৃহস্পতিবার যে পেঁয়াজ ২২ টাকা পাইকারি দিয়েছি, আজ তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশীয় পেঁয়াজ ২৮-৩০ টাকা বিক্রি করলেও আজ সেই পেঁয়াজ ৩৮ টাকা বিক্রি করেছি। 


তিনি আরও বলেন, সামনে রমজান মাস দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রচুর রয়েছে। এরমধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। রমজান মাসে আরও দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমদানি স্বাভাবিক হলে আশা করা যায়, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে। 


হিলি স্থলবন্দরের আমদানি রফতানি কারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন জানান, পুরনো আইপির মেয়াদ ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছিল যা গত বুধবার শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেওয়ায় আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারছেন না। যার কারণে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের মূল্য বাড়াচ্ছে।রমজান মাসে মানুষ পড়বে ভোগান্তিতে। সরকার যদি অন্তত রমজান মাসে আমদানির অনুমতি দেয় তাহলে এই মাসে বাজার স্বাভাবিক থাকতো। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সরকারের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।


হিলি স্থলবন্দরের ম্যানেজার অশিত কুমার শ্যানাল জানান, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি আইপি মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত  ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত বন্দর দিয়ে কোনও পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। বুধবার ১৫ মার্চ শেষ দিনে বন্দর দিয়ে সাতটি ট্রাকে ১৯২ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল।


হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, আমদানির অনুমতিপত্র ঢাকার খামাড়বাড়িতে অথোরিটি ইস্যু করে। আমরা স্থানীয় অফিসগুলো শুধু অনলাইনে দেখতে পায় কে আইপি পেলো বা কতদিন মেয়াদ। সেই মোতাবেক পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছিলাম যেসব অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল সেগুলোর মেয়াদ ১৫ মার্চ পর্যন্ত। গতকাল সেই সময় শেষ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে অনলাইনে কোনও আইপি দেখা যাচ্ছে না। আর আইপি যদি না পায় তাহলে এলসি খোলাসহ রিলিজ অর্ডার পাওয়ার সুযোগ নেই। যার কারণে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।