বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ, রূপাতলী, বাংলাবাজার, পোর্টরোড, নতুন বাজার, কাশিপুরসহ অধিকাংশ বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত বছরের মতো এবছরও কেজি দরে তরমুজ বিক্রি চলছে দেদারছে। শুধু বিভিন্ন বাজারেই নয়; পাড়া ও মহল্লায় ভ্যানগাড়িতে ফেরি করেও কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমী রসালো ফল তরমুজ।
নগরীর পোর্ট রোডের একটি দোকানে তরমুজ ক্রয় করতে আসা ক্রেতা আসাদুজ্জামান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদিত হয়। অথচ সেই অঞ্চলে যদি এতো দাম হয়, তাহলে দেশের অন্যস্থানে তরমুজ সোনার হরিণে রূপ নিবে। এজন্য জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এখন থেকেই মাঠপর্যায়ে অভিযানে নামার জন্য তিনি আসাদুজ্জামান অনুরোধ করেন।
নগরীর পোর্ট রোডের পাইকারী আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে আসা একাধিক কৃষকরা বলেন, চলতি মৌসুমে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি তরমুজ উৎপাদিত হলেও খুচরা বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে বাজারে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। এরপর অস্থির করে তোলা হচ্ছে মৌসুমি এই ফলের বাজার। ফলে কম আয়ের ক্রেতারা তরমুজ ভোগ করতে পারেন না। কৃষকরা আরও বলেন, ছয় থেকে সাত কেজি ওজনের একটি তরমুজ পাইকারী দামে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ খুচরা বিক্রেতারা সেটি যখন ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তখন তরমুজটির দাম হয় পাঁচশ’ টাকার কাছাকাছি।
নগরীর চৌমাথা বাজারে তরমুজ ক্রয় করতে আসা ক্রেতা মোঃ আলম হাওলাদার বলেন, কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা ক্রেতা ঠকানোর একটি কৌশল। ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে সহজে বেশি টাকা আয় করতেই বিক্রেতারা এমন ফাঁদ পেতেছেন। ক্রেতাদের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও চৌমাথা বাজারের তরমুজ বিক্রেতা শাহাদাত হোসেন বলেন, অনেকে কেজি দরে বিক্রি করলেও আমি পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করছি। তার (শাহাদাত) কথাকে ক্রেতা মোঃ আলম হাওলাদার চ্যালেঞ্জ করতেই শাহাদাত স্বীকার করে বলেন, ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে আমিও তরমুজ বিক্রি করছি।
ওই তরমুজ বিক্রেতা আরও বলেন, কেজিতে তরমুজ বিক্রি করলে ক্রেতাদের সাথে কথা কম বলে বেশি লাভ করা যায়। একটি তরমুজ ১৩০ টাকায় ক্রয় করা হলেও কেজি দরে বিক্রি করলে কমপক্ষে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। পিস হিসেবে বিক্রি করতে গেলে ১৩০ টাকার তরমুজ ক্রেতারা ১০০ টাকাও দাম বলেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি বরিশালের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক তাওফিকুল আলম বলেন, চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যা গত মৌসুমের চেয়ে ১১ হাজার ৭৬৩ হেক্টর বেশি। চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলায়।
নগরীর পোর্ট রোডের ঘাটে ট্রলার ভর্তি করে পাইকারী মূল্যে তরমুজ বিক্রি করতে আসা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এলাকার তরমুজচাষী নান্না গাজী বলেন, আমরা আড়তে শতক হিসেবে তরমুজ বিক্রি করছি। কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রেতারা অধিকমুনাফার লোভে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করে ক্রেতাদের সাথে প্রতারনা করছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বাজারে তরমুজ উঠতে শুরু করেছে। কৃষকরা তরমুজ শতক হিসেবে বিক্রি করেছেন। কোনো খুচরা বিক্রেতা যেন ক্রেতাদের সাথে প্রতারনা করে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করতে না পারেন সেজন্য খুব শীঘ্রই অভিযান শুরু করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন বাজারে বিক্রেতাদের কেজি দরে তরমুজ বিক্রি না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।