প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪২
গাজীপুরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল কারখানার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম মারা গেছেন। শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ঘটনাটি ঘটে ২২ সেপ্টেম্বর, টঙ্গীর সাহারা মার্কেটে অবস্থিত একটি কেমিক্যাল কারখানায় আগুন নেভাতে গিয়ে তিনি দগ্ধ হন। তার শরীরের ৪২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল এবং চিকিৎসার জন্য তাকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরের মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের আরও চারজন আহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ফায়ারফাইটার শামীম আহমেদ এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ফায়ারফাইটার নুরুল হুদা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের মৃত্যু ফায়ার সার্ভিসের আত্মত্যাগের মিছিলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
খন্দকার জান্নাতুল নাঈম ২৪ আগস্ট ১৯৮৮ সালে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের খন্দকার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মোল্লার টেক উদয়ন বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে এসএসসি এবং ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে স্টেশন অফিসার হিসেবে মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর হিসেবে চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং এক সন্তানের জনক। তার বাবা খন্দকার মোজাম্মেল হক এবং মা দেলোয়ারা বেগম। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অগ্নি দুর্ঘটনার মোকাবিলা করেন।
অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের মৃত্যুকে দেশের জনগণ ও ফায়ার সার্ভিস সম্প্রদায় গভীরভাবে শোক প্রকাশ করছে। এ পর্যন্ত ৫১ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের সেবা দিতে গিয়ে আত্মত্যাগ করেছেন।
তিনি বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিসের বীর সদস্য হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার সাহস, দায়িত্ববোধ ও ত্যাগজনিত কাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ফায়ারফাইটারদের জন্য প্রেরণার উৎস হবে।