প্রকাশ: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৭
মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য কোনো করিডোর প্রস্তাব করেননি তিনি। তার মতে, রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিক মহল এখন আর গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না, অথচ এটি এখনো জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।
বাংলাদেশে দীর্ঘ আট বছর ধরে আশ্রয় নিয়ে আছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন নিয়ে বারবার আলোচনা হলেও এখনো কার্যকর কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি কক্সবাজারে আয়োজিত অংশীজন সংলাপে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরাসরি কথা বলেন টম অ্যান্ড্রুজ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটি সমাধান করতে হলে প্রথমেই বিশ্বকে এ সংকটের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হবে। কোনো সমস্যা স্বীকার না করলে তার সমাধান সম্ভব নয়। অথচ এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রোহিঙ্গা সংকট প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে।
বিশ্বের নানা নতুন সংকটের আড়ালে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা যেন ভুলে যাওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন টম অ্যান্ড্রুজ। তিনি সতর্ক করে বলেন, রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে এবং তারা কোন দাবিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তা জানতে হবে। এভাবেই সমাধানের সঠিক পথ খুঁজে বের করা সম্ভব।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে বলেও মত দেন তিনি। পরিকল্পিত আক্রমণ ও সহিংসতা বন্ধ না হলে সমস্যার মূল সমাধান সম্ভব নয়। মিয়ানমারের জনগণ হিসেবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকার দিতে হবে বলেও জোর দেন তিনি।
করিডোর নিয়ে একটি ভুল বোঝাবুঝির প্রসঙ্গে টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, তিনি কখনোই মানবিক করিডোরের প্রস্তাব দেননি। কারণ করিডোরের একটি আইনগত সংজ্ঞা আছে। তিনি শুধু বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটটি আঞ্চলিক এবং জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে হলে কেবল নিরাপত্তা নয়, তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও দক্ষতা উন্নয়নের দিকেও মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেন জাতিসংঘের এই প্রতিনিধি। তার মতে, কেবল প্রস্তুত পরিবেশ নিশ্চিত করলেই টেকসই সমাধান আসবে।
টম অ্যান্ড্রুজের এই বক্তব্য আবারও মনে করিয়ে দিল যে, রোহিঙ্গা সংকট কোনো একটি দেশের সমস্যা নয়; বরং এটি পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও মানবাধিকারের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এখন দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ।