প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থী নিজেই বসলেন শিক্ষকের চেয়ারে

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩০ অপরাহ্ন
প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থী নিজেই বসলেন শিক্ষকের চেয়ারে

কুমিল্লার দেবীদ্বারে মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ইকরামুল হাসান প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে বিষয়টিকে আরও তীব্র আকার দেয়। 


শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগ দাবি করে। অভিযোগগুলোতে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এবং বিদ্যালয়ের অর্থের অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে। 


অভিযান চলাকালে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেবীদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা ঘটনাস্থলে যান। তবে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকে। 


প্রধান শিক্ষক সেদিন বিদ্যালয় ত্যাগ করার সময় ইকরামুল হাসান প্রধান শিক্ষকের অফিসে ঢুকে তার চেয়ারে বসে ছবি তোলেন। ওই ছবি পোস্ট করার পর ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এবং স্থানীয়রা এতে প্রতিক্রিয়া জানান। ছবির ক্যাপশনে ইকরামুল লেখেন, “আমাদের সু-সম্মানিত আলমগীর স্যার কোথায়?”


বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইকরামুল বলেন, “সবাই অফিস কক্ষ ত্যাগ করার পর আবেগে চেয়ারে বসে ছবি তুলেছিলাম। এটা আমার ঠিক হয়নি, সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।"


অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এটি একটি মহলের প্ররোচনায় মিথ্যে অভিযোগ। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ কিছু উপস্থাপন করতে পারেনি।”


বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিগার সুলতানা বলেন, “ঘটনার দিন আমরা প্রধান শিক্ষককে নিরাপত্তার জন্য বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে বিধি অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীর চেয়ারে বসে ছবির মাধ্যমে যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, সেটিও আমলে নেওয়া হবে।”


এ ঘটনা স্থানীয় সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং এটি শিক্ষাব্যবস্থায় কর্তৃপক্ষের প্রতি একটি সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়।