রাজনগর উপজেলা পরিষদে চেক জালিয়াতি করে দেড় কোটি আত্মসাতে জড়িত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে রাজনগর উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর ইনিউজ৭১ডটকমে ‘ রাজনগরে চেক জালিয়াতিতে কোটি টাকা আত্মসাত ফাঁস’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের টনক নড়ে প্রশাসনে। নিউজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ অনলাইনে প্রতিবাদে সোচ্চার হন। অবশেষে প্রতিবাদটি অফলাইনও ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজনগর সদর ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ময়নুল ইসলাম মাল্লুমও সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক আহমদ উর রহমান ইমরান। বক্তব্য দেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বকুল, রাজনগর ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কালাম রাসেল, সমাজকর্মী আজিজুল হক রিপন, রাজনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য মাছুমুর রহমান, রাজনগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ তোয়াবুর রহমান, সাংবাদিক মো. ফরহাদ হোসেন, চিকিৎসক শাহ আবুবকর সুমন, ব্যবসায়ী ফয়ছল আহমদ, সিলেট ‘ল’ কলেজের কলেজের সাবেক ছাত্রদল নেতা বদরুল ইসলাম সাহেদ ও শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি খান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সরকারের দেড় কোটি টাকা আত্মসাত সিন্ডিকেটের মূলহুতা রাজনগরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: বাদশা মিয়া এবং সাবেক সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (বর্তমানে বড়লেখার সিএ) অনুপ চন্দ্র দাশ। বক্তারা জড়িতদের আইনের আওতায় এনে যথাযত শাস্তির দাবি করেন এবং সভা শেষে ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন। এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতারণা ও চেক জালিয়াতিতে মোট এক কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা আত্মসাতের বাইরেও রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর অনুপ দাস শ্রীমঙ্গল শহরতলীর সবুজবাগ এলাকার ডুপ্লেক্স বাসভবনসহ রাতারাতি নামে বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। জানা যায়, তার স্ত্রী ঝুমি রানী সরকার বর্তমানে ডেপুটেশনে শ্রীমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। বড়লেখার ইউএনও গালিব চৌধুরী জানান, অনুপ দাস রাজনগর উপজেলায় যেভাবে চেক জালিয়াতি করেছেন সেই কায়দায় বড়লেখায়ও ২২ লক্ষ টাকা জালিয়াতি করেছেন। তবে তার স্ত্রীর মাধ্যমে এই টাকা পরিশোধ করলেও তিনি গত ৬ নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। আমরা তার সাথে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কবে বরখাস্ত করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি মাসে র আমরা বরখাস্তের চিঠি ইস্যু করেছি। পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর করা হলো কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে কর্মস্থল থেকে তিনি যে দিন থেকে অনুপস্থিত এই তারিখে বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজনগর এবং জেলা প্রশাসন থেকে তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে গত বৃহস্পতিবার এসে পৌছেছে, তাই চিঠি ইস্যু করতে দেরি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই বরখাস্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে খোলা কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে রাজনগর উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ বাদশা মিয়া পরিষদে অনুপস্থিত রয়েছেন। অনেকদিন অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। দেখা গেছে তার বসার কক্ষ তালাবদ্ধ। অনেকের ধারণ চেক জালিয়াতির সাথে তার সংশ্লিষ্টতা মুছে ফেলতে ফাইল গায়েব করে গা ডাকা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, আর্থিক অনিয়ম, টেন্ডার ইজারা প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, মাঠ পর্যায়ের দাপ্তরিক কাজে সুবিধা আদায় এবং দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সাবেক ইউএনও শাপলা বলেন, এসব অনিয়ম দুর্নীতিতে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই প্রতারণা চেক জালিয়াতি সব দায় সিএ অনুপ দাসের।
সিএ অনুপ দাস এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাদশা মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাজনগর উপজেলার ভারপ্রাাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।
প্রসঙ্গত, সদ্যবিদায়ী জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন গত ২৮ অক্টোবর রাজনগর উপজেলা পরিষদ পরিদর্শনে গেলে হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, ক্যাশ বহি, সাধারণ তহবিল, রাজস্ব তহবিল, উন্নয়ন তহবিলের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও রেজিস্টার পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় বিশাল অঙ্কের জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।