প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৪
সিলেটের তাহিরপুর সীমান্তে অবস্থিত জাদুকাটার নদী থেকে লুট হওয়া প্রায় ১১০ কোটি টাকার বালি ও পাথরের নিলাম ঢাকায় গোপনে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) সভা কক্ষে এই নিলামের আয়োজন করা হয়। নিলামের তথ্য অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী ও সর্বোচ্চ দরদাতার বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক জানান, নিলামে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনলাইনে বিএমডির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. শাহরুখ আলম শান্তনু বলেন, তিনি নির্ধারিত সময়ের পরে নিলামে যুক্ত হয়েছেন এবং বিস্তারিত তথ্য বিএমডি দিতে পারবে। বিএমডির সহকারী পরিচালক আজিজুল ইসলামও নিলাম সংক্রান্ত ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় সাড়া দেননি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিলামের আড়ালে সিন্ডিকেটের মূল হোতা যুক্তরাজ্যে পলাতক সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত চন্দ্র সরকারের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব। তিনি জাদুকাটার নদীর তীরে অবৈধ খনিজ বালি, পাথর, সিঙ্গেল, বোল্ডার ও নুড়ি পাথর উত্তোলন ও মজুদ করেছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, মোতালেব এক সময় টং দোকানে পান বিক্রি করে সংসার চালাতেন, পরে বালি-পাথরের অবৈধ বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
উচ্চ আদালত ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে বিএমডি কিছু কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশসহ কিছু অসৎ কর্মকর্তার মদদে এই অবৈধ খনিজ উত্তোলন ও নিলামের ব্যবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ড্রেজার, বোমা ও সেইভ মেশিন ব্যবহার করে সরকারি খাস ভূমি থেকে এবং ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে বালি-পাথর উত্তোলন করা হয়।
স্থানীয় এলাকায় জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী ছড়ার পাড়, লাউরগড় বাজার, বানরাকোনা হাওর ও পার্শ্ববর্তী ঢালার পাড়ে খনিজ বালি-পাথরের স্তূপ লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও লাউরগড় উচ্চ বিদ্যালয় ও গ্রামাঞ্চলের ঝোপঝাড় ও জঙ্গলের মধ্যে এ ধরণের স্টক রাখা হয়েছে। অনেক ছবি ও ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমে সংরক্ষিত রয়েছে।
মোতালেব নিজেকে জাদুকাটা বোল্ডার পাথর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দাবি করে চাঁদা তোলা ও সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার কথা বললেও স্থানীয়রা তার অবৈধ কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, জাদুকাটা নদীর পূর্ব তীরে অবৈধভাবে উত্তোলিত সব বালি-পাথর জব্দ করতে তাহিরপুরের ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে অবৈধ খনিজ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।