প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪২
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার কয়েকটি গ্রাম গড়াই নদীর তীব্র ভাঙনের কারণে বিলীন হতে বসেছে। প্রতিদিন নদীর ভাঙন বাড়তে থাকায় গ্রামবাসীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক তাদের ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বড়ুরিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর মন্ডল জানিয়েছেন, তার দেড় হাজার বিঘার বেশ ফসলি জমি নদীর গর্ভে চলে গেছে এবং ভাঙন এই গতিতে চলতে থাকলে বাড়ি-ঘরও রক্ষা সম্ভব নয়।
নদী ভাঙনের গতি জুন মাসের শুরুতে বাড়তে শুরু করে এবং এখন পাট, কলা ক্ষেত ও হলুদের জমিসহ ফসলি জমিগুলো ধ্বংস হতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৃষ্ট জিওব্যাগও ভাঙনের তীব্রতায় ক্ষয় হচ্ছে। অনেক পরিবারের ঘরবাড়িও ভেঙে পড়েছে, ফলে তারা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
শৈলকুপা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গড়াই নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশ ভাঙনপ্রবণ। বড়ুরিয়া গ্রামে ভাঙন সবচেয়ে বেশি, প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। বড়ুরিয়া গ্রামের বাবুল মোল্লা জানান, ১৯৬২ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাঙন গত ২০ বছরে অনেক বেশি তীব্র হয়েছে। ওই এলাকার জমির পরিমাণ এখন প্রায় ২৫০ বিঘা পর্যন্ত সংকুচিত হয়েছে। গ্রামের ৭০০ পরিবারের মধ্যে এখন মাত্র ২০০ পরিবার রয়ে গেছেন, বাকি সবাই স্থানান্তরিত হয়েছেন।
নদীর ওপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গনেশপুর আদর্শ গ্রামে এই পরিবর্তন স্পষ্ট। নদীর ভাঙনে ওপারে নতুন চরের সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু সেখানে কুষ্টিয়ার লোকজন জবরদখল করে শৈলকুপার মানুষকে যেতে দিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর এ অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে উঠছে, কিন্তু সরকারি কোনো স্থায়ী উদ্যোগ এখনও গ্রহণ করা হয়নি।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, বর্ষার শুরু থেকে ভাঙন রোধে অস্থায়ী সমীক্ষা ও কাজ চলছে যা আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত চলবে। পরে স্থায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তিনি জানান, নদীর ওই অংশের অবতল ভূ-খণ্ড এবং পানির চাপ বৃদ্ধির কারণে পলি সরে ভাঙন বাড়ছে। জমি উদ্ধারের ব্যাপারটি জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব বলে তিনি জানান।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, গড়াই নদীর ওপারে কুষ্টিয়ায় জেগে ওঠা চর উদ্ধারে এবং সেখানে শৈলকুপার মানুষের চাষাবাদ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর যৌথ বৈঠকের পর সীমানা নির্ধারণের জন্য সরকারি জরিপ অধিদফতরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন দ্রুত নদী পাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
এই ভাঙনের ফলে এলাকার মানুষ ও কৃষি জীবিকা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারি তৎপরতা না থাকায় ভাঙনের তীব্রতা এবং মানুষের দুর্ভোগ দিনে দিনে বাড়ছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই গ্রামগুলো সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।