মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে চারদিন ধরে টানা বর্ষণ চলছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে বরিশাল শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনজীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আনিসুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) বরিশালে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
জলাবদ্ধতার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নবগ্রাম সড়ক, বগুড়া রোডের মুন্সীর গ্রেজ এলাকা, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এলাকা, সাগরদী ধান গবেষণা কেন্দ্র সংলগ্ন জিয়া সড়ক ও পলাশপুর ভাটিখানা এলাকাতে। নবগ্রাম সড়কে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে বটতলা বাজার পর্যন্ত অংশ সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলমান থাকায়, শিক্ষার্থীদের কোমরপানি মাড়িয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক সালাম বলেন, ‘পানির কারণে সড়কে যানবাহন চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। পানিতে গাড়ি বিকল হয়ে যাচ্ছে। এখন রিকশা চালিয়ে উপার্জন করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
এদিকে, নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বরিশাল নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি, দ্রুত পরিস্থিতি উন্নতি ঘটবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে বরগুনা ও পটুয়াখালীতেও যথাক্রমে ১১৩ ও ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানে শহরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।