প্রকাশ: ৭ জুলাই ২০২৫, ২১:৩৬
বরগুনার পাথরঘাটায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গত দুই দিনের ব্যবধানে এই উপজেলায় ২৫ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং একজন মারা গেছেন। ৬ জুলাই রবিবার সকাল থেকে ৭ জুলাই সোমবার দুপুর পর্যন্ত পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসতে থাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে। সোমবার ভোরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাইফুল (৩০) নামে এক ব্যক্তি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে শিশু, নারী ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রয়েছেন। চরদুয়ানী, নাচনাপাড়া, কালমেঘা, কাঁঠালতলী ও পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছেন। এসব এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এডিস মশাবাহিত রোগটি। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এর আগে ২৫ জুন মারা যান সাধনা রানী (২৫) এবং ২৮ জুন মৃত্যু হয় উপজেলা পরিষদের প্রধান সহকারী সিরাজুম মুনিরার (৩৩)। এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডে বেড সংকট প্রকট। চিকিৎসাসেবা পেতে এসে রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ওষুধ ও চিকিৎসকের সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর, যা রোগীদের অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলছে। অনেক রোগী মেঝেতে কিংবা বেঞ্চে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিয়মিত নয়, জরুরি সেবা পেতে দেরি হচ্ছে। ডেঙ্গু শনাক্তে পর্যাপ্ত পরীক্ষার সরঞ্জাম ও ওষুধ না থাকায় রোগীদের বরিশাল বা বরগুনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানো, মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল, ওষুধ ও বেড সরবরাহ জরুরি। স্থানীয়ভাবে কোনো নিয়মিত মশক নিধন কর্মসূচি না থাকায় রোগের বিস্তার রোধ সম্ভব হচ্ছে না।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া পাথরঘাটার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এলাকাবাসীর দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুত হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও ডেঙ্গু চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা।
ডেঙ্গুতে বারবার মৃত্যুর ঘটনায় পাথরঘাটার মানুষ আতঙ্কিত। তারা এখন প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ভূমিকার অপেক্ষায় রয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থার অভাবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।