প্রকাশ: ২ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৭
নওগাঁ জেলা মরিচ চাষে ভাল ফলন হলেও দাম কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এই বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় মরিচের উৎপাদন বাড়লেও বাজারে দাম নিম্নমুখী হওয়ায় চাষীদের আয় দাঁড়াচ্ছে উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম। এতে অনেক কৃষকই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় মোট ৯৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, যেখান থেকে প্রায় ৯৬০০ টনের মতো শুকনা মরিচ উৎপাদন আশা করা যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সাদা, আকাশী এবং স্থানীয় জাতের মরিচের চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে এ বছর ক্ষেতে রোগবালাই কম হয়েছে এবং মরিচের গাছগুলো ভালই বেড়ে উঠেছে।
মরিচের উৎপাদন বাড়লেও বাজারে এর দাম কম হওয়ায় কৃষকরা মুখ খারাপ করছেন। সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর সাপ্তাহিক শুক্র ও মঙ্গল হাটে মরিচ বিক্রেতারা প্রতিদিন সকালে মরিচ নিয়ে আসেন। তবে দাম এতটাই কম যে অনেক সময় উৎপাদন খরচও উঠছে না। পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি পর্যন্ত পড়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম।
বদলগাছী উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান বাবুল জানান, তার ৮ কাঠা জমিতে মরিচের চাষের জন্য প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি মাত্র দেড় হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, “এত খরচ করার পরেও আমরা লাভের মুখ দেখতে পারছি না।”
অন্য কৃষক ডিএম ইকবাল কবির বলেন, “গত বছর মরিচের দাম প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ছিল। এখন ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদনের খরচই উঠছে না। যদি দাম ৫০ টাকা হয়ে যায়, তাহলে হয়তো কিছু লাভ হবে।”
কৃষক শহীদুল ইসলাম জানান, তিন বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। তার মতে, প্রতি বিঘায় অন্তত ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এ মৌসুমে দাম কম থাকায় তারা লোকসান গুনছেন। সেদিক থেকে তিনি আশা করেন, মরিচের দাম শীঘ্রই উন্নতি হবে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “গত বছর অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে মরিচের উৎপাদন কম ছিল। ফলে দাম বেশি ছিল। এবার আবহাওয়া ভালো হওয়ায় উৎপাদন বেড়েছে, দাম কিছুটা কমেছে। আমরা কৃষকদের মাঠে রোগবালাই কমাতে ও ভালো ফলন নিশ্চিত করতে পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি আগামীতে দাম ভালো থাকবে।”
কৃষকরা এখন চাই সরকারী ও বেসরকারি সংস্থাগুলো তাদের জন্য মূল্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে আসুক যাতে মরিচ চাষে লাভজনকতা বজায় থাকে। অন্যথায় কাঁচা মরিচ চাষ থেকে তারা পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হবেন।
বর্তমানে মরিচ উৎপাদনে স্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে দাম সংকট কৃষি অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে। তাই কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সচেতনতা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন।
নওগাঁর কৃষকদের জন্য এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ পরিকল্পনা ও সহায়তা অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।