প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১১:২৮
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার বামনপাড়া সীমান্তে টিকটক ভিডিও করতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে আটক হয়েছে দুই কলেজ ছাত্র। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ২৪৬ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সীমান্ত এলাকা দেখতে গিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে ছবি ও ভিডিও তুলতে গিয়ে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভারতের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে নিয়ে যায়।
আটককৃতদের নাম মোহাম্মাদ মিনহাজুল ইসলাম ও মোহাম্মাদ তামিম আহমেদ সৌরভ। তারা নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার বাসিন্দা এবং যথাক্রমে নওগাঁ ডিগ্রী কলেজ ও সাপাহার সরকারী ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নরত। তারা ৫-৬ জন বন্ধুর সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিল এবং মজার ছলে ভিডিও করছিল। কিন্তু অজান্তেই দুই বন্ধু সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে চলে যায়। তাদের আটক করার খবর পেয়ে বিজিবি তাৎক্ষণিকভাবে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
ঘটনার পর বামনপাড়া বিওপি'র নায়েক সুবেদার আবু তালেব সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সীমান্তে গিয়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দুই ছাত্রকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। পতাকা বৈঠকে উভয় পক্ষের সম্মতিতে ওই দুইজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় এবং বিজিবি তাদের সাপাহার থানায় সোপর্দ করে। পরে থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল সাদিকুর রহমান জানান, সীমান্তে ঘোরাঘুরির সময় ছবি তোলা বা ভিডিও করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, সীমান্তে চলাচলে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। সীমান্তে বেড়াতে যাওয়া অনেকেই নিরাপত্তার বিষয়টি না বুঝে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়ে।
সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, বিজিবি’র অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে মামলা করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্ত আইন ভাঙলে যেকোনো নাগরিকের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয়ভাবে এ ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের সচেতনতার অভাবে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অভিভাবকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব এবং ভাইরাল হবার আকাঙ্ক্ষা আজকাল যুব সমাজকে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে উৎসাহিত করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্ত নিরাপত্তা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। কোনো অবস্থাতেই সীমান্তে ঢুকে ভিডিও করা বা সেলফি তোলার মতো কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।