ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের ১০৩ নং এস ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চরম অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, পরীক্ষার দিন উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ওরফে দুলাল একাই তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন।
পরীক্ষাকক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম—তৃতীয় শ্রেণিতে ১ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৫ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৪ জন। বিদ্যালয়টি কার্যত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং কাগজে-কলমে চলা একটি প্রতারণার চিত্র বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক রেজাউল করিম প্রশিক্ষণে, শারমিন আক্তার ডেপুটেশনে, আবুল বাশার তালুকদার ও দিতী বেপারী ছুটিতে রয়েছেন, কিন্তু ছুটির তথ্য হাজিরা খাতায় উল্লেখ নেই। অপর শিক্ষক খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের দেখে পরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে দেরি করেছেন এবং প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা অতি নগণ্য হলেও কাগজে-কলমে শতভাগ উপস্থিতি দেখানো হয়। প্রতিদিন গুটিকয়েক শিক্ষার্থী আসলেও শিক্ষকদের নিয়মিত হাজির দেখিয়ে সরকারি সুবিধা গ্রহণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, অডিট বা পরিদর্শনের সময় পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়।
প্রধান শিক্ষক বলেন, “বিদ্যালয়ে ৫২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, এর মধ্যে ২২ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। শিক্ষক সংকট আছে, তবে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করছি।” হাজিরা খাতায় অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভুল হয়েছে, ঠিক করে নেবো।”
এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আকতার হোসেন বলেন, “বিদ্যালয়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক অনুপস্থিতির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।”
এই ঘটনাটি আবারও প্রশ্ন তুলেছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার তদারকি, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা নিয়ে।