প্রকাশ: ৭ মে ২০২৫, ১২:৫
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ঝিঙে চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামটি বর্তমানে ঝিঙে চাষের জন্য বেশ পরিচিত। এখানে দুই যুগের বেশি সময় ধরে কৃষকরা সবজি চাষের সাথে ঝিঙে চাষে যুক্ত, এবং বর্তমানে ৮০ শতাংশ কৃষক ঝিঙে চাষ করছেন। ছোট-বড় সকল প্রকার জমিতে ছড়িয়ে আছে ঝিঙে ক্ষেত, এবং সারা গ্রামটি এখন ‘ঝিঙে গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
এ বছর মোট ২০০ বিঘা জমিতে ঝিঙে চাষ করা হয়েছে, এবং প্রতি হেক্টরে ২০ মেট্রিক টন করে ঝিঙে উৎপাদন হয়েছে। এই উৎপাদনের অধিকাংশই বড়লেখা উপজেলায় চলে আসছে, যেখানে প্রতি সপ্তাহে হাটবারে ঝিঙে বেচাকেনার রমরমা ব্যবসা চলে। বিশেষত, রবি, মঙ্গল এবং শুক্রবার বড়লেখা সদরে এই ব্যবসা বেশি হচ্ছে, যার ফলে স্থানীয় কৃষকরা বেশ কিছুটা লাভবান হচ্ছেন।
মোহাম্মদনগরের চাষিরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর তারা ঝিঙে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। কৃষক মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, তিনি প্রতি বছর ঝিঙে চাষ করেন এবং বর্তমানে তার দেড় বিঘা জমি থেকে তিনি প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ কেজি ঝিঙে বিক্রি করছেন। আরও কিছুদিন পরে, তিনি ২০০ থেকে ২৫০ কেজি পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন। তিনি জানান, প্রতি কেজি ঝিঙে বর্তমানে ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা শেষের দিকে ২০ থেকে ২৫ টাকায় চলে আসবে।
অপর এক কৃষক আব্দুর রহিম জানান, তিনি ২৫ হাজার টাকা খরচ করে ঝিঙে চাষ করেছেন এবং এ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার ঝিঙে বিক্রি করেছেন। তার মতে, ঝিঙে চাষে লাভ বেশি হওয়ায় তিনি তার আরও কয়েক বিঘা জমি ঝিঙে চাষের জন্য ব্যবহার করছেন।
এই গ্রামের চাষিরা জানান, তারা ছোট ছোট জমিতে ঝিঙে চাষ শুরু করেছিলেন, তবে বর্তমানে অনেকেই বড় জমিতেও ঝিঙে চাষ করছেন। চাষি দুধু মিয়া জানান, ঝিঙে চাষের ফলে তার জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে। তিনি তার এক ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য টাকা পাঠাতে পেরেছেন এবং জমিও কিনেছেন।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর মোট ৫৩ হেক্টর জমিতে ঝিঙে চাষ হয়েছে এবং উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে, ঝিঙে চাষে লাভবান কৃষকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, এবং তাদের জীবনে আর্থিক সমৃদ্ধি এসেছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, চলতি বছর মৌলভীবাজার জেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ঝিঙে চাষ হয়েছে এবং উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার মেট্রিক টন। তারা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কৃষক তৈরি করছেন এবং সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
ঝিঙে চাষে স্বাবলম্বী হওয়া কৃষকরা এখন তাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। একসময় যারা অনিশ্চিত ছিল, তারা এখন তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষত, এখানকার কৃষকরা এখন ধাপে ধাপে তাদের জীবনে এক নতুন মোড় আনছেন এবং এই গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায়, শুধু কৃষকরা নয়, সমগ্র এলাকাও লাভবান হচ্ছে। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও পাইকাররা এসে এখানে ঝিঙে কিনতে আসছেন এবং তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝিঙে পৌঁছে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ঝিঙে চাষের সুযোগ এখন আরেকটি সম্ভাবনা হিসেবে পরিণত হয়েছে এবং তাদের সফলতার গল্প এখন শোনা যাচ্ছে জেলার অন্য এলাকাতেও।
এটি শুধু একটি কৃষি উদ্যোগের সফলতা নয়, বরং এটি একটি সামাজিক পরিবর্তনের পরিচায়ক। যে গ্রামটি একসময় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল, সেই গ্রাম এখন দেশের কৃষি চাষে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। ভবিষ্যতে, এখানকার কৃষকরা আরও উন্নত প্রযুক্তি ও শিক্ষার মাধ্যমে ঝিঙে চাষের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।