প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২৫, ১৬:১৬
ভালো জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে মাদারীপুরের অনেক যুবককে লিবিয়ায় পাচার করছে একটি সংঘবদ্ধ দালালচক্র। এই চক্রের মূলহোতা হিসেবে উঠে এসেছে সদর উপজেলার শিরখাড়া গ্রামের বাসিন্দা জামাল কারিগরের নাম। লোভনীয় বেতনের চাকরি ও ইতালির ভিসার আশ্বাস দিয়ে যুবকদের লিবিয়ায় নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় মাফিয়াদের কাছে।
ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ, লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পর যুবকদের হাত-পা বেঁধে তাদের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। পরিবার থেকে টাকা নেওয়ার পরেও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঘুনসি গ্রামের বাসিন্দা হাসান হাওলাদার ১৩ লাখ টাকায় চুক্তি করে জামালের মাধ্যমে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে বিপদে পড়েন। পরে আরও ৫ লাখ টাকা আদায় করলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি। একই গ্রামের রুহুল শেখ জামালের নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
এভাবে একে একে মিন্টু হাওলাদার, মিঠু দাস, শাহ আলম মাতুব্বরসহ প্রায় ৫০ জন যুবক লিবিয়ায় জিম্মি হয়েছেন। মুক্তিপণের জন্য তাদের পরিবারগুলো দিশেহারা। অনেকে মামলা করতে গিয়েও জামালের পাল্টা মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।
হাসান হাওলাদারের বাবা বলেন, “আমার ছেলে নিখোঁজ, মামলা করেছি, কিন্তু জামাল উল্টো আমাদের নামে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জামালের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। জামিনে মুক্তি পেয়ে বারবার তিনি একই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানিয়েছেন, “এই চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, “এমন দালালদের নাম প্রকাশ করে হাট-বাজারে তালিকা টানানো হবে।”
অন্যদিকে জামাল কারিগর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি কাউকে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দিইনি বা নির্যাতন করিনি।”
এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই জামাল কারিগর একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচয়কে ব্যবহার করে এই মানবপাচার সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। এখনই সময় এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার।