কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায় ধান চাষে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে যান্ত্রিকীকরণ এবং নতুন উদ্ভাবনী ব্রি ধান-১০২। উপজেলার ইউছুফপুর গ্রামের একটি ৫০ একরের সমলয় মাঠে এবার এই ধান চাষে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। ফলন যেমন বেড়েছে, তেমনি সময় ও খরচে সাশ্রয় ঘটেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের অংশ হিসেবে ইউছুফপুরে একশ একরের একটি কৃষি ব্লকের ৫০ একর জমিতে চাষ হয় ব্রি ধান-১০২। সিডলিং ট্রেতে চারা তৈরি করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রে রোপণ, এবং পরে কম্বাইন হারভেস্টারে কর্তন, মাড়াই ও বস্তাবন্দি করার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছে যান্ত্রিকভাবে।
স্থানীয় কৃষক মনুমিয়া জানান, প্রতি একরে গড়ে ৯১ মণ করে ধান পাওয়া গেছে, কোনো কোনো জমিতে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ মণে। এর পেছনে যান্ত্রিকভাবে ৩০ দিন বয়সী চারা রোপণ করাই মূল কারণ বলে মনে করেন তিনি। কৃষক দেলোয়ার হোসেনের মতে, এই নতুন জাতের ধানে উফশী বৈশিষ্ট্য থাকায় ফলন বেড়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ৫০ একর জমিতে চাষ করে অতিরিক্ত প্রায় ৯০০ মণ ধান উৎপাদিত হয়েছে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১২ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি যান্ত্রিকীকরণে রোপণ ও কর্তনের খরচ সাশ্রয় হয়েছে আরও প্রায় ৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৫০ একর জমি থেকে কৃষকেরা প্রায় ২২ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৫০ টাকার অতিরিক্ত আয় ও সাশ্রয় পেয়েছেন।
কৃষক এমদাদুল হক জানান, আগে এক বিঘা জমি রোপণ করতে ৮-৮.৫ হাজার টাকা খরচ হতো এবং সময় লাগত ২-৩ দিন। এখন তা কমে ১.৫-১.৭ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে, আর সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ শেষ হওয়ায় শ্রমিক সংকট এবং মজুরির বাড়তি চাপ থেকেও মুক্তি মিলেছে।
ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর এক একরে একটি প্রদর্শনী প্লট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ বছর কৃষকেরা নিজেরাই এগিয়ে এসেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বানিন রায় বলেন, "আমরা মূলত দুটি উদ্দেশ্যে কাজ করছি—যান্ত্রিকীকরণ এবং ব্রি ধান-১০২ এর সম্প্রসারণ। এই জাতটি জিংক, প্রোটিন ও অ্যামাইলোজ সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান বলেন, "সমলয় চাষাবাদ কৃষকদের শ্রম, সময় ও খরচ বাঁচিয়ে ফলন বাড়িয়েছে। আগামীতে কৃষকের উন্নয়নে আমরা আরও ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করবো। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় এ ধরণের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"
দেবীদ্বারে এই উদ্যোগ দেশের কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও উদ্ভাবনী জাত সম্প্রসারণে একটি অনুকরণীয় মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।