পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় এক গৃহবধূর রহস্যময় মৃত্যু ঘটেছে। নিহত শাহিনুর বেগম (৩২) নামে এই নারীকে পুলিশ তার নিজ বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। মৃতদেহ উদ্ধারের পর তার স্বজনরা দাবি করেছেন, তাকে হত্যা করে ঘরের মাচায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের উত্তর রণগোপালদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
শাহিনুর বেগম উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের মুন্সি বাড়ির মোঃ আলম মুন্সির দ্বিতীয় পুত্র ইমরুলের স্ত্রী ছিলেন। তিনি কয়েকদিন আগে তার দুই ছেলেকে নিয়ে পিত্রালয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন, পরে ননদের বাড়ি গিয়েও সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি তার বড় ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে, সেদিনের মতো পরিবারের অন্যান্য কাজ করেন। তবে, বিকেল ৩টার দিকে তার স্বামী পানের কাজ শেষে বাজারে চলে যান। কিছুক্ষণ পর বড় ছেলে স্কুল থেকে ফিরে মায়ের খোঁজ পান না। সন্ধ্যায়, বাড়ির আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করার পর ঘরের মাচায় তার মাকে মৃত অবস্থায় ঝুলন্ত দেখতে পান। পরে সে ডাক চিৎকার করলে বাড়ির লোকেরা এসে পুলিশে খবর দেন।
নিহতের মা রনিয়া বেগম জানিয়েছেন, তার মেয়ে শাহিনুরের জীবন ছিল দুঃখভরা। তার মেয়ে বারবার বলতেন যে, দুই সন্তান রেখে তিনি কখনো আত্মহত্যা করবেন না। তবে, তার জামাই ইমরুল মুন্সি টাকা-পয়সা নিয়ে প্রায়ই অত্যাচার করতেন। রনিয়া বেগম দাবি করেন, কয়েকদিন আগে যৌতুকের জন্য শাহিনুরকে মারধর করা হয়েছিল এবং তিনদিন ঘরবন্দী রাখা হয়েছিল। এরপর তিনি তার চাচাশ্বশুরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। রনিয়া বেগম বলেছেন, “আমার মেয়েকে মেরে ঘরের মাচায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এটা আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
অন্যদিকে, শাহিনুরের স্বামী ইমরুল মুন্সি বলেছেন, তিনি কখনো তার স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করেননি এবং তাদের পরিবারে সুখ শান্তিতে জীবন কাটছিল। তিনি বলেন, “কিভাবে এমন ঘটনা ঘটলো আমি বুঝতে পারছি না।”
দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলীম তালুকদার জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মৃতদেহের বিষয়টি আত্মহত্যার মতো মনে হলেও, পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাই সঠিক তদন্তের জন্য লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কী বলে এবং এই রহস্যজনক মৃত্যুর পেছনে কী আসল ঘটনা রয়েছে।