শ্রীমঙ্গে ট্রেনের ধাক্কায় পশ্চাতে প্রাণ গেল পল্লী চিকিৎসকের

শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ রোডস্থ রেলগেটে শনিবার বেলা একটার দিকে ঘটে একটি হৃদয়বিদাড়ক ট্রেন দুর্ঘটনা, যেখানে মৌলভীবাজারের বিশিষ্ট পল্লী চিকিৎসক দীনেশ চন্দ্র সরকার (৭৫) প্রাণ হারান। স্থানীয়রা জানান, জননী নার্সারির সামনে রেললাইনে অসুস্থতাজনিত কারণে সেখানে বসে থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস তাকে ধাক্কা দেয়।

সত্যতা জানতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো হলেও শরীরের অবস্থা গুরুতর দেখেই তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ছেলে জীবন কৃষ্ণ সরকার জানান, তার বাবা পল্লী চিকিৎসক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার বারইকোনা এলাকার যোগেশ চন্দ্র সরকারের বড় ছেলে দীনেশ চন্দ্র শান্তি নিকেতন ফার্মেসির মালিকও ছিলেন। ভগ্নিপতির ব্যবসা থাকার পরও তিনি গরিব-দুঃখী রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন।

উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের আকতার মিয়া বলেন, “আমরা দুপুরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মাথা ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন তিনি, সরাসরি হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান।” তদন্তের জন্য তাঁরা দ্রুত দেহ হাসপাতাল থেকে থানা হেফাজতে হস্তান্তর করেন।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মওদুত হাওলাদার জানিয়ে দিয়েছেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দেহ পরিবারকে হস্তান্তর করা হবে এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, রেলগেটে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অস্থিতিশীলদের বসার কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটে। এ জায়গায় নিরাপত্তা সংকেত ও সাউন্ড সিস্টেম না থাকায় পথচারীর প্রাণহানি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শারমীন আক্তার জানান, মৃতদেহের প্রাথমিক ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন দেখে স্পষ্ট যে গুরুতর মাথাব্যথা ও বক্ষাঘাতেই মৃত্যু হয়েছে। শরীরের অবস্থা দেখে দূর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ইমিডিয়েট চিকিৎসা সম্ভব ছিল না।

এমতাবস্থায় শ্রীমঙ্গলে আবারো রেল ক্রসিং সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব, পথচারীর অবজেক্টিভ সেফটি এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রসঙ্গ গর্জে উঠেছে। পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, যাতে এ ধরনের শোকান্ত দিন আর কেউ দেখতে না হয়।