অপহরণের পাঁচ বছর পর ফিরে আসলেন সামাউন

সামাউন আলী ভানোর ইউনিয়নের গোগবস্তি গ্রামের আব্দুস সোবহানের একমাত্র ছেলে। পাঁচ বছর আগে ঢাকায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে সামাউনকে নিয়ে যান তাঁর চাচাতো ভাই জমিরুল ইসলাম, যিনি মিঠুন নামেও পরিচিত। মিঠুনের সঙ্গে যোগাযোগের পরিমাণে কিছুদিনের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর বাবা সোবহান মিঠুনের কাছে ছেলেকে ফেরত চেয়েছিলেন এবং মিঠুনও ফেরত পাঠানোর কথা বলে সোবহানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেন। তবে সামাউনকে আর ফেরত দেননি। 

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর, সোবহান বিভিন্ন জায়গায় ছেলের খোঁজ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত তিনি ঠাকুরগাঁও আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় মিঠুন ও তাঁর বাবা আব্দুল খালেককে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এরপর বালিয়াডাঙ্গী থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং প্রায় সাত মাসের পর মামলার অগ্রগতি দেখা যায়।

শুক্রবার গভীর রাতে অপহরণকারীরা সামাউনকে বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় রেখে চলে যায়। স্থানীয় পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। সামাউন জানান, তাঁকে নরসিংদী জেলার এক গুদামে রাখা হয়েছিল এবং সেখানে তাকে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বিভিন্নভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। 

সামাউন বলেন, “কত সময় ধরে ওই অবস্থায় ছিলাম, বুঝতে পারিনি। আমার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরও আর কোথায় আছেন, জানি না।” তাঁর বাবা সোবহান বলেন, “এতোদিন ধরে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য যা কিছু করা গেছে, করেছি। আদালতের পরামর্শেই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল। এর ফলে অপহরণকারীরা ছেলেটিকে ফেরত দিলো।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিবাকর অধিকারী জানান, “পুলিশের তৎপরতা অপহরণকারীরা বুঝতে পেরে ছেলেটিকে ঘটনাস্থলে ছেড়ে পালিয়ে গেছে। শনিবার বিকেলেই আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছেলেটিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি কিছুটা অসুস্থ মনে হচ্ছেন, তাই তাঁর চিকিৎসা প্রয়োজন।”

এভাবে ৫ বছর পর পরিবারে ফিরে আসা সামাউনের গল্প সত্যিই এক অভূতপূর্ব অনুভূতি এনে দিয়েছে তাঁর পরিবার এবং গ্রামের লোকজনের কাছে।