প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২২:১৬
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক সময়ের জনপ্রিয় যাত্রা দল ‘রূপশ্রী অপেরা’ আজ শুধু স্মৃতির পাতা জুড়েই বেঁচে আছে। সেই স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতেই এবার প্রকাশিত হলো ‘রূপশ্রী অপেরা’ শিরোনামের গবেষণামূলক একটি বই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ শহরের প্যারীমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার মিলনায়তনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি রচনা করেছেন তরুণ গবেষক ও লেখক মোস্তফা আল মেহমুদ রাসেল, যিনি নিজের শৈশবের স্মৃতিকে কেন্দ্র করে এই যাত্রাদলের ঐতিহ্য ও অবদানকে তুলে ধরেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা ও প্রাবন্ধিক মামুন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, যাত্রাপালা আমাদের সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা সাধারণ মানুষের চেতনায় মনুষ্যত্ব ও নৈতিকতার বীজ বুনে দেয়। রূপশ্রী অপেরা সেই ঐতিহ্যের গর্বিত প্রতিনিধি ছিল।
বক্তব্য রাখেন বদলগাছী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক রবিউর রফিক, জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম, এবং রূপশ্রী অপেরার কর্ণধার খগেন্দ্র নারায়নের ছোট ভাই সত্যেন্দ্র নারায়ণ লস্করসহ আরও অনেকে।
বইয়ের লেখক মোস্তফা আল মেহমুদ রাসেল জানান, ছোটবেলায় স্কুলের মাঠে আয়োজিত একটি যাত্রাপালায় রূপশ্রী অপেরার পরিবেশনা তাঁকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে সেই স্মৃতি আর ভুলতে পারেননি। বহু বছর পর সেই যাত্রা দলের ইতিহাস ও শিল্পীদের জীবন সংগ্রামকে নথিভুক্ত করার তাগিদ থেকেই বই লেখার প্রেরণা পান তিনি।
নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা রূপশ্রী অপেরা সময়ের প্রবাহে হারিয়ে যায়। তাদের কুশীলবরা ছড়িয়ে পড়ে নানা স্থানে, অনেকের খবরই আর কেউ রাখেনি। সেই হারিয়ে যাওয়া অধ্যায়ের অনুসন্ধান চালিয়েই লেখক বইটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন যাত্রাশিল্পের জৌলুস ও পতনের গল্প।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে বইটির প্রকাশনাকে ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেন। তারা মনে করেন, এটি শুধু একটি যাত্রাদলের ইতিহাস নয়, বরং একটি অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতি, সংগ্রাম এবং আত্মপরিচয়ের দলিল।
‘রূপশ্রী অপেরা’ বইটি শুধুমাত্র নওগাঁ নয়, পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলের সংস্কৃতি সংরক্ষণের এক মূল্যবান প্রয়াস হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংস্কৃতিমনা মানুষরা।