চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে। রোববার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে গিয়ে মঞ্চ এবং আশপাশের চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় তারা শেখ হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয়।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, হামলা বলতে শুধু ব্যানার খুলে ফেলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এখানে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এবার অনুষ্ঠানটি ৪৭ বছরে পা রাখতে চলেছে। ভাঙচুরের পর ডিসি হিলে এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিষদ। প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে পরিষদের অভিযোগ।
চট্টগ্রামের ডিসি হিলে হামলার পর ওই স্থানে আগামীকালের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানান সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী টিটু। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে এসে ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দেয়। একপর্যায়ে তাদের উগ্রতা দেখে আমরা এক পাশে সরে দাঁড়াই। এরপর তারা মঞ্চের কাপড় ছিঁড়ে ফেলল এবং মঞ্চের পেছনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলে।
তিনি বলেন, ‘হামলার পর পুলিশ সদস্যরা এসেছেন। আগামীকাল অনুষ্ঠান করার মতো অবস্থা এখন আর নেই। আমি শুনেছি, আমরা যখন ডিসি অফিসে মিটিং করেছিলাম, ওই দিন ওখানে যারা উপস্থিত ছিল, তাদের কয়েকজন হামলার সময়ও ছিল। ব্যাকস্টেজের ডিজাইন তারা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আগামীকালের অনুষ্ঠান আমরা বাতিল করছি।’
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় নেয়া হয়েছে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘হামলা বলতে শুধু ব্যানার খুলে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাতটি সংগঠন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে থাকে। জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস) বলেছে, তারা এই প্রোগ্রাম আয়োজন করতে দিতে চায় না। কিন্তু তারা লিখিত কোনো কিছু দেয়নি। তারা কয়েকজনের নাম দিয়ে বলেছে, এরা প্রোগ্রামে থাকতে পারবে না। পরে তারা দলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্বৈরাচারের দোসরদের প্রোগ্রাম করতে দেবে না। সন্ধ্যার দিকে এসে তারা শুধু ব্যানার খুলে নিয়েছে।’
এর আগে, রোববার ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ অভিযোগ তুলে প্রায় ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ডিসি হিলের পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মঞ্চে তুলতে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। বিকেলে জেলা প্রশাসন থেকে সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদের সংগঠকদের কাছে এই তালিকা পাঠানো হয়।
এ ছাড়া সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে ‘সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদযাপন মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন মানববন্ধন করে। ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার চিহ্নিত দোসরদের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠান উদযাপন আয়োজনের প্রতিবাদে’ এই মানববন্ধন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার দাবি জানানো হয়।