প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:১৫
নওগাঁ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সুলতানপুর মটেরঘাট ও সুলতানপুর জেলে পাড়া সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা এই মানববন্ধনটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজন করেন। তাদের দাবি ছিল, সেচ প্রকল্পগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হোক, যাতে তারা কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী কৃষকরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে সেচ প্রকল্পগুলো ব্যবহার করে আসছেন, তবে বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে বর্তমানে তাদের ফসল উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়েছে। বক্তারা অভিযোগ করেন যে, বর্তমান সরকারের পদস্থ ব্যক্তিরাই এসব প্রকল্পে তাদের হাত পাকিয়ে কৃষকদের উপর অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কৃষকরা বলেন, "যারা কৃষকদের জীবিকা নিয়ে খেলা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।" তারা আরও জানান, সুলতানপুর মটেরঘাট ও সুলতানপুর জেলে পাড়া সেচ প্রকল্পের জোরপূর্বক দখলদারি এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পর, বিদ্যুৎ বিলের অঙ্ক বাড়ানোর কারণে তারা বিপাকে পড়েছেন। কৃষকরা এসব অভিযোগ তুলে সরকারের কাছে তাদের ন্যায্য দাবির বাস্তবায়ন চান।
এদিনের মানববন্ধনে নওগাঁ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাসান ইমাম তমাল, ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সাবেদুল ইসলাম সাবু, সদর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফায়সাল আজম ওলি, কৃষক মুনসুর আলী মাস্টার, ফজলু সাকিদার, মহাতাপ সাকিদার, লিটন সাকিদারসহ আরো অনেক কৃষক উপস্থিত ছিলেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে, প্রকল্পগুলোর মালিকানা নিয়ে সংঘর্ষের ফলে কৃষকদের জন্য কাজ করার পরিবেশ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও বক্তারা এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত করার অভিযোগ তুলেছেন। তাদের মতে, স্থানীয় সংসদ সদস্যের চাচাতো ভাই সালমান ফারসি সৌরভ এই সেচ প্রকল্পগুলো দখল করেছেন এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছেন। তারা দাবি করেন, সৌরভের কর্মকাণ্ডের জন্য সেচ প্রকল্পের পরিবেশ খারাপ হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে, এই সময়ে যখন ইরি-বোরো মৌসুম চলছে, কৃষকরা জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য পানির ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তাদের চাষাবাদে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায়, কৃষকদের জীবিকা ও আয়ের অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হয়েছে। বক্তারা জানান, যদি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান না করা হয়, তবে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল উৎপাদন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মানববন্ধন শেষে কৃষকরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন। এতে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করার অনুরোধ জানান। তাদের মতে, সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না হলে তারা তাদের জমির ফসল বাঁচাতে পারবেন না। সেজন্য তারা সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন।
এদিকে, স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা জানান, দুই সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ বিল না দেয়ার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে নতুন সংযোগ প্রদান করার ব্যাপারে তারা কিছুটা অগত্যা হওয়ার কথা বলেন। তাদের মতে, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান একটি কঠিন প্রক্রিয়া, তবে কৃষকদের সাহায্য করতে তারা সবসময় প্রস্তুত।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সেচ প্রকল্পগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে নওগাঁ জেলার কৃষি উৎপাদনে। বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে বর্তমানে কৃষকরা তাদের ফসলের প্রয়োজনীয় পানি পেতে সমস্যায় পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের জন্য একটি কার্যকরী সমাধান প্রয়োজন, যা তাদের চাষাবাদ ও জীবিকা রক্ষায় সহায়ক হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা যদি যথাসময়ে তাদের দাবির পূর্ণতা না পান, তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে তাদের দাবি পূরণের জন্য যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছে না। কৃষকরা আশা করেন যে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান হবে এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে কৃষি কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
এছাড়া, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যে আন্দোলনে অংশ নেন, তা থেকে এই প্রতিবাদে আরও একটি মাত্রা যোগ হয়েছে। তারা দাবি করেছেন, তাদের দাবির প্রতি প্রশাসনের গম্ভীর দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া উচিত। এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, তাদের দাবির প্রতি সাড়া দেওয়া হবে এবং দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পরেও, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কৃষকরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন। কৃষকরা মনে করেন, তাদের ন্যায্য দাবি যদি পূর্ণতা না পায়, তবে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।