প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৭
জামালপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। শহরের দয়াময়ী চত্বরে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে সড়ক অবরোধ করে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ জানায়। সড়কের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে এবং ফুটবল ও লুডু খেলে আন্দোলনকারীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবাদ মূলত জামালপুরে গত ৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মিছিলগুলোর বিরুদ্ধে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, জামালপুরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিছিল করার পর তারা এ ধরনের প্রতিবাদে নেমেছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা এ বিষয়ে প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগও তুলেছে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের মিছিল ও আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি গঠিত হচ্ছে। তারা এসবের প্রতিবাদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আন্দোলনকারীরা এমনকি মিছিলের মাধ্যমে প্রশাসন ও সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং বলেন যে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জামালপুর জেলা শাখার আহবায়ক মীর ইসহাক হাসান ইখলাস বলেন, "আমরা বহুদিন ধরেই দেখছি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মিছিল করছে, আমরা চাই প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। দুই দিন আগে আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিছিল হয়েছিল, এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে। প্রশাসন চুনোপুঁটিদের গ্রেফতার করছে, তবে বড়দের গ্রেফতার করছে না।"
এছাড়াও আন্দোলনকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার বিষয়টিও তুলে ধরেছে। তারা সরকারের কাছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে এবং প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানান, জামালপুরে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে।
পুলিশও পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করছে। তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে আন্দোলনকারীরা জানায়, তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বে না।
জামালপুরের ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিশেষ করে ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে, যা প্রশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। ছাত্রদের এই ধরনের আন্দোলন সরকারের সামনে এক নতুন অঙ্গীকারের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের আন্দোলন তাদের শুধু জামালপুরেই নয়, বরং সারা দেশে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, এই আন্দোলন ছাত্র সমাজের অধিকারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। তাদের লক্ষ্য হল, সমাজের সকল স্তরের মধ্যে সমতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
এই আন্দোলন যেভাবে দ্রুত সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তাতে শিক্ষার্থীরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হতে পারে। তাদের দাবি যদি দ্রুত পূর্ণ না হয়, তবে তাদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তারা জানিয়েছে, যদি তাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয়, তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে।
তবে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে যে তারা দ্রুত আন্দোলনকারীদের দাবি অনুসারে পদক্ষেপ নেবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য তারা সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে, জামালপুরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন স্থানীয় রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই আশা করছেন যে এই আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংঘর্ষের জন্ম না দিয়ে বরং একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে সকল পক্ষ তাদের অধিকার সুরক্ষিত অনুভব করবে।