প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:০
পটুয়াখালীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বানিজ্যিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে 'নাপ্পি', যা আদিবাসী রাখাইনসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনপ্রিয় খাদ্য। তবে এই প্রক্রিয়ায় মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য সম্মত পদ্ধতি, যার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে 'নাপ্পি' তৈরি হওয়ার কারণে তীব্র দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে এবং এর সাথে মিশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল।
আগে এই 'নাপ্পি' তৈরি করতেন স্থানীয় নারী-পুরুষরা, তবে এখন বানিজ্যিকভাবে এটি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে পটুয়াখালীসহ সমুদ্র উপকূলের শুটকি পল্লীতে এই 'নাপ্পি' তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়। 'নাপ্পি' তৈরির জন্য ছোট ভুলা চিংড়ি মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক ছোট মাছ ব্যবহার করা হয়। তবে, মাছ শুকানো এবং পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের সময় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
এতে খালি পায়ে বা নোংরা জুতা পরে পঁচা মাছ পিষে শুকানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। পরে, এতে লবণ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ প্রক্রিয়ায় তৈরি 'নাপ্পি' খেলে ডায়রিয়া, কলেরা বা আমাশয়সহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাপ্পি বানানোর প্রক্রিয়া তীব্র দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অস্বস্তির কারণ হচ্ছে। কমরপুরের বাসিন্দা মো. সাইফুল জানান, 'নাপ্পি' তৈরির জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এবং পরিবেশের জন্যও বিপজ্জনক। একই অভিযোগ করেছেন শুটকি পল্লীর ব্যবসায়ী রাকিব, যিনি বলছেন, এই প্রক্রিয়া প্রশাসন থেকে তদারকি না হওয়ায় তা বেআইনি ভাবে চলছে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকতা আবু রায়হান বলেন, 'আমরা শীঘ্রই এই 'নাপ্পি' এর স্যাম্পল কালেকশন করে পরীক্ষা করব। যদি এতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা জীবাণু পাওয়া যায়, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তবে, স্থানীয় নাপ্পি ব্যবসায়ী মো. কালাম দাবি করেন, 'নাপ্পি' একটি জনপ্রিয় খাদ্য এবং এতে কোন ক্ষতিকর প্রভাব নেই। তিনি বলেন, 'আমরা এ খাবার খাই এবং আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি।'
এখন প্রশ্ন হলো, প্রশাসন কি যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এবং স্থানীয়দের জন্য নিরাপদ 'নাপ্পি' প্রক্রিয়াজাতকরণ নিশ্চিত করবে, নাকি এ অস্বাস্থ্যকর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে?