প্রকাশ: ৯ নভেম্বর ২০২৩, ০:৪৫
মেয়াদ শেষ হওয়ার চারদিন আগেই অব্যাহতি নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর অব্যাহতি চেয়ে আবেদন জমা দিয়ে প্যানেল মেয়র-১ এর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন সাদিক আবদুল্লাহ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল হোসেন লিটু। ফলে দলীয় সাবেক মেয়রের হাত থেকে আর দায়িত্ব বুঝে নেওয়া হচ্ছে না নতুন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের। এদিকে অব্যাহতি নেওয়ার পর সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে নগর ভবন থেকে হেঁটে কালীবাড়ি রোড বাসভবনে ফেরেন সাদিক আব্দুল্লাহ। এসময়ে নগর ভবন থেকে কালীবাড়ি পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার নগরবাসী স্লোগান ও ফুল ছিটিয়ে বিদায় জানান তাকে।
নগর ভবনের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নগর ভবনে আসেন বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এ সময় তিনি অব্যাহতি চেয়ে আবেদন জমা দেন। এতে তিনি নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনিক পদের কর্মকর্তাদের না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আবেদনটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে সাদিক আবদুল্লাহ নগরভবন ছেড়ে যান। আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সিটি মেয়রের দায়িত্বে থাকার মেয়াদ ছিল। কিন্তু চারদিন আগে তিনি অব্যাহতি নেওয়ায় প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল হোসেন লিটু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ১৪ নভেম্বর তিনি নতুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন সাংবাদিকদের জানান, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সকালে নগরের মুসলিম গোরস্থানে তার প্রয়াত মা সাহান আরা বেগমের কবর জিয়ারত করেন। সেখান থেকে নগর ভবনে যান। নগর ভবনের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। পরে প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল হোসেনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আজ থেকে আমি জনতার কাতারে ফিরে যাচ্ছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। কর্মকালে কারো মনে যদি ব্যথা দিয়ে থাকি, মনে রাখবেন না। সবই করেছি সিটি করপোরেশনের জন্য। ব্যক্তিগত স্বার্থ আমার ছিল না। সবকিছু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আগামী ১৪ তারিখ নতুন মেয়র আসছেন। আপনারা তাকে বরণ করবেন। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন। আমি আছি, ইনশাআল্লাহ আমি থাকবো। আপনারা আজকে আমাকে যে ভালোবাসা দিলেন তার ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না। নতুন মেয়র যেকোনো বিষয়ে ডাকলে আমাকে পাশে পাবেন।
সাদিক বলেন, জনগণ এমপি প্রার্থী হিসেবে আমাকে চাইছেন। আমরা রাজনীতি করি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আপনারা দেখেছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সামনের নির্বাচনেও তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। শেষবারের মতো আমি এই কথাই বলব, ‘মোর পরিচয় এই হোক, আমি বরিশালবাসীর লোক’।
এ সময় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম, প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নগর ভবন থেকে বেরিয়ে সাদিক হেঁটে নগরের সোহেল চত্বরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে নগরের সদর রোড লাইন রোডের প্রবেশমুখে সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের বিদায়ী সংবর্ধনা নেন তিনি। সেখান থেকে কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে যান। প্রায় এক কিলোমিটার পথের দুই পাশে অপেক্ষমাণ জনতা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সাদিক আব্দুল্লাহর জনসংবর্ধনা চলাকালীন পুরো নগরী যানজটের কবলে পড়ে। জেলখানার মোড় থেকে নথুল্লাবাদ, লঞ্চঘাট থেকে রূপাতলী, বাংলাবাজার সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোতে অবস্থান করা যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। এসময় সাধারণ মানুষকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত: ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ২০২৩ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তার চাচা আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি গত ১২ জুনের ভোটে ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।