ফল চাষে স্বাবলম্বী নলছিটির শাহআলম

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: বুধবার ৩০শে জুন ২০২১ ০৫:৩৯ অপরাহ্ন
ফল চাষে স্বাবলম্বী নলছিটির শাহআলম

ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবি। মাসে বেতন পেতেন ৮ হাজার টাকা। এখন সেই মানুষটির মাসিক আয় ৫০হাজার টাকার বেশি। শুধু নিজের আয় বাড়াননি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন আরও দশ থেকে বার জন মানুষের। তিনি হলেন, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের সফল নার্সারী চাষী মো. শাহআলম হাওলাদার । 




২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিভাগের চাকুরী ছেড়ে নিজের বাড়ীতে মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে ১০ হাজার টাকা নিয়ে মাল্টা চাষের শুরু করেন । সেই থেকে শুরু আর এখন তার ফলের চারার বাগানের আয়তন সবমিলিয়ে আট একর। শুধু মাত্র মাল্টা চাষ দিয়ে শুরু করলেও এখন তার বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ২৫শত জাতের ফলের চারা পাওয়া যায়। 





দেশি বিদেশী মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ জাতের শুধু আমের চারাই রয়েছে তার বাগানে। তিনি জাপান ,চীন ও থাইল্যান্ড থেকেও বিভিন্ন জাতের ফলের চারা সংগ্রহ করে থাকেন। যার মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিংমাই,জাপানি মিয়াজাকি, থাইল্যান্ডের কিং অফ চাকাপাত, তাইওয়ানের তাইওয়ান গ্রিন, আমেরিকার রেড পালমার সহ আরও অনেক ধরনের আম গাছের চারা । 





শুধু নলছিটি উপজেলায় না তার বাগানের চারা এখন সারাদেশের কৃষকদের কাছে তিনি বিক্রি করে থাকেন। নলছিটি উপজেলা কৃষি দপ্তরের সাধারন কৃষকদের মাঝে বিতরনকৃত ফলের চারাগুলো এখান থেকেই সরবরাহ করা হয়। 





নলছিটি কৃষি দপ্তরের কৃষি সহকারী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান রুবেল বলেন, তার চারাগুলোর গুনগত মান ভালো হওয়ায় সহজে মারা যায় না। কিন্তু অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করলে অনেক সময় দেখা যায় চারা লাগানোর পর মরে যাচ্ছে । এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ্য হয় তাই আমরা প্রায় সময়েই তার কাছ থেকে বিভিন্ন প্রদর্শনীর চারা গুলো সংগ্রহ করে থাকি। এছাড়া তার কাছে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন জাতের চারা পাওয়া যায় তাই একটু যাচাইবাছাই করে ক্রয় করা যায়। 





মো. শাহআলম হাওলাদার বলেন, চাকুরীতে যা বেতন পেতাম তা দিয়ে কোনরকম সংসার চলে যেতো বাড়তি কিছু করার সামর্থ্য থাকতো না। আমার চাকুরী জীবনের এক বন্ধুর সাফল্য দেখে অনুপ্রানিত হয়ে নিজের বাড়ীতে প্রথমে অল্প জায়গায় মাল্টা চাষ শুরু করি । 





এরপর দেখলাম ভালোই লাভ হচ্ছে এছাড়া নলছিটি উপজেলা এবং তার আশেপাশের উপজেলায় ভালো মানের কোন নার্সারী না থাকায় মানুষজন অন্য বিভাগ থেকে চারা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় তাদের আবহাওয়া ও মাটির সাথে আমাদের মাটির ধরনের মিল না থাকায় যেসব চারা থেকে আশানুরুপ ফল পাওয়া যায় না। 





তিনি বলেন, "আমার এখানের চারাগুলো মরে যাওয়ার প্রবনতা অনেক কম তাই আমার চারাগুলোর চাহিদা বেশি। ফলে আমার বিক্রিও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে জমির পরিমান ও চারা চাষের পরিমানও বাড়াতে থাকি। একই সাথে লোকবলও বাড়তে থাকে। বর্তমানে আমার এখানে নিয়মিত ৫জন শ্রমিক এবং অনিয়মিত আরও ৫/৬জন শ্রমিক কাজ করেন। ১০হাজার টাকা দিয়ে শুরু করলেও তার এখন পুঁজি ২০ লাখ টাকার বেশি। 





লাভের টাকায় নার্সারীর পরিধি বাড়িয়েছেন আর অন্য পুঁজির মধ্যে রয়েছে নলছিটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৬০হাজার টাকা ও বাংলাদেশ অগ্রনী ব্যাংক থেকে ১লাখ টাকা নেওয়া ঋন। 





তিনি বলেন, আমি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমার নার্সারীর পরিধি আরও বাড়াতে চাই এবং বিদেশী আরও কিছু ভালো ফলের চারা সংগ্রহ করতে চাই। সরকারি সহায়তা পেলে এখানে আমি আরও ২০জন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে উপজেলার মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখতে পারবো। 




নলছিটিবাসীসহ দক্ষিন অঞ্চলের মানুষ অল্প টাকায় ভালো মানের বিভিন্ন ফল খেতে পারবে। আর সেটা অবশ্যই একদম প্রাকৃতিক কোন ধরনের রাসায়নিকমুক্ত। 





নলছিটি কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলি বলেন, তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা আমরা তাকে সার্বক্ষনিক বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে থাকি। তিনিও যে কোন প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তার দেখাদেখি উপজেলার অনেকেই এখন ফল গাছ ও ফলের চারা চাষের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।