হলুদ জাতের তরমুজ চাষে লাভের আশা মোস্তাফিজুরের

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: শনিবার ৮ই মে ২০২১ ১২:০৩ অপরাহ্ন
হলুদ জাতের তরমুজ চাষে লাভের আশা মোস্তাফিজুরের

চারদিকে ধান ক্ষেত মাঝখানে এক বিঘা (৩৩শতক) জমিতে সবুজ গাছের ডগায় দুল খাচ্ছে হলুদ জাতের ছোট-বড় নানা অকৃতির তরমুজ। আর এমন দৃশ্য নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন এর কামতা গ্রামের যুবক মোস্তাফিজুর রহমান (৩৬) এর তরমুজ ক্ষেতের।


চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে এক বিঘা জমিতে হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করেছন। বর্তমানে তার ক্ষেতে জুড়ে ছোট-বড় সারিবন্ধভাবে তরমুজ এর সমারোহ। আর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে তরমুজগুলো বিক্রি ও খাওয়ার উপযুক্ত হবে জানা গেছে তরমুজ চাষির সাথে কথা বলে। 


তরমুজ চাষি মোস্তাফিজুর রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে সম্ভাবনাময় নতুন জাতের তরমুজ চাষ করতে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন পাশ্ববর্তী বগুড়া জেলার আদমদিঘি উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ নামের আমার এক চাচাতো ভাই। তিনিও হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। সেখানে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তার উৎসাহে আমি হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী হলে তিনি ঢাকার এক বীজ ভান্ডার থেকে তরমুজের বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে দেয়।


তিনি বলেন, বীজ নিয়ে আসার পর বাড়িতে পলিব্যাগে করে চারা তৈরী করি। এরপর আমার ১বিঘা জমি উর্বর করতে গোবর, পরিমাণ মতো ডিএপি, পটাশ, জিপসাম ও দানাদার সার ব্যবহার করি। মালচিং পদ্ধতিতে চাষের জন্য ৮টি বেড তৈরী করি। নির্দিষ্ট দুরুত্বে রোপন করা হয় তরমুজের চারা।


এরপর মাচা তৈরী করে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তেমন গুরুত্বর কোন রোগ-বালাই হয়নি। তবে ক্ষেতে ডগপচাঁ রোগ দেখা দিয়েছিল শুরুর দিকে । তখণ স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করেছিলাম। এর পর এখন পর্যন্ত আর কোন রোগ-বালাই নেই।


শ্রমিক,সার,বীজ,কীটনাশক,সেচসহ সবমিলে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫-৬০হাজার টাকার মত।

 

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার ক্ষেতে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০পিস তরমুজ আছে। আর ১০ থেকে ১৫দিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযুক্ত হবে। প্রতিটি তরমুজ প্রায় ৪-৫কেজি করে হবে। বর্তমান হলুদ তরমুজের বাজার মূল্য খুচরা ৬০-৭০টাকা কেজি দরে । আর তিন বার তরমুজ ক্ষেত থেকে তোলা যায়। যদি দুই বারও তুলতে পারি এবং দাম ভালো পাই তবে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মত লাভ করতে পারবো।


প্রতিদিন আশে-পাশের অনেক মানুষ আসে তরমুজ ক্ষেত দেখতে ও ছবি তুলতে। এই এলাকায় আমিই প্রথম হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করেছি। আশা করছি দাম ভালো পেলে আগামীতেও এই জাতের তরমুজ আরও বড় আকারে বেশি জমিতে চাষ করবো।


পাশ্ববর্তী পারইল গ্রামের মো. ইউসুফ নামের এক তরুন তরমুজ চাষি মোস্তাফিজুর রহমানের ক্ষেত দেখতে এসেছেন।  তার সাথে হলে তিনি জানান, আমাদের এলাকায় এই প্রথম হলুদ জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। থোকায় থোকায় তরমুজ ধরেছে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। শুনলাম তেমন রোগ-বালাই নেই, তরমুজ চাষে খরচও কম। লাভ বেশি। আমিও আগামীতে হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করতে চাচ্ছি। সে জন্যই খোঁজ খবর নিতে এসেছি।


আলমগীর হোসেন নামের যুবক জানান, রাস্তার পাশে তরমুজের বড় ক্ষেত, অনেক গুলো হলুদ তরমুজ ধরে আছে, তাই দেখতে আসলাম। পাশের বিশা গ্রামে আমার বাড়ি। ক্ষেতটি ঘুরে দেখলাম খুবই ভালো লাগলো। এমন হলুদ জাতের তরমুজ নওগাঁর অন্য কোন স্থানে চাষ হয় কিনা জানা নেই। এখানে এসে আমারও জমিতেও হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী হলাম।


স্থানীয় পারইল ইউনিয়ন এর দায়িত্বে নিয়োজিত উপ সহকারী কৃষিকর্মকর্তা এনামুল হক জানান, তরমুজ চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি উত্তম। এই এলকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। আমার জানা মতে নওগাঁতে এত বৃহৎভাবে তরমুজ চাষ এখনও কেউ শুরু করেনি। মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম হলুদ জাতের তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। তরমুজ বেশ বড় হয়েছে। আর ১০-১৫দিনের মধ্যে বিক্রি বা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হবে। এখন পর্যন্ত তেমন কোন রোগ-বালাই নেই। তাছাড়া পোঁকা-মাকড় এর আক্রমনও তেমন দেখা যাচ্ছেনা।


তিনি আরো বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে তরমুজ চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। সাধারণত ফল পাঁকতে বীজ বোনার পর থেকে ৮০-১১০ দিন সময় লাগে। এলকায় হলুদ জাতের তরমুজ চাষে ব্যাপক ছাড়া পড়েছে। অনেকই হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করতে ইচ্ছাপোষন করছেন। আর আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই ক্ষেত পরিদর্শন করতে যাই।  প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া যখন কোন সমস্যা হবে আমাদের জানালে আমরা চেষ্টা সঠিক পরামর্শ দেয়ার।


#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১