গোয়ালন্দে অগ্নিদগ্ধ স্কুলছাত্র নিতুনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
মইনুল হক মৃধা-রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সোমবার ৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:০১ অপরাহ্ন
গোয়ালন্দে অগ্নিদগ্ধ স্কুলছাত্র নিতুনের মৃত্যু

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে আগুনে দগ্ধ হয়ে ছয়দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত মারা গেছে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিতুন সরকার। সোমবার ভোর চারটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন তার বাবা নিমাই সরকার। তার শরীরের ৪৪ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল, যার ফলে কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফরিদপুরের মধুখালির বাসিন্দা নিমাই সরকার বর্তমানে ময়মনসিংহের ভালুকায় চাকরি করেন। স্ত্রী কাঞ্চন সরকার ও একমাত্র সন্তান নিতুনকে নিয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া বাসায় থাকতেন।  


গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এতে ভাড়াটিয়া দীনবন্ধুর ঘরসহ চারটি কক্ষ দগ্ধ হয়। আগুনে নিতুন ছাড়াও আহত হন জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সোমা বেগম ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। ধোঁয়া ও তাপে সোমা বেগমের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, দেয়াল ভেঙে নিতুনকে উদ্ধার করা হয়, তবে ততক্ষণে সে মারাত্মক দগ্ধ হয়ে যায়।  


অগ্নিকাণ্ডের সময় বাড়ির মালিকসহ বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়া সেখানে থাকলেও বাড়ির প্রবেশপথে একটি মাত্র লোহার দরজা থাকায় উদ্ধার অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাড়ির নকশায় কোনো বিকল্প দরজা রাখা হয়নি, যা বিপদের সময় বড় সমস্যা তৈরি করেছে। বাড়ির মালিক হাসেম বেপারীর মেয়ে হামিদা খাতুন জানান, আগে জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিকল্প দরজা তৈরি করা সম্ভব হয়নি, তবে এখন তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।  


গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার সাবেকুল ইসলাম জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিলম্ব হয় কারণ কাছের রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী পড়ে থাকায় এবং একটি ভবনের দেয়াল বাধা সৃষ্টি করায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। পরে পাইপ টেনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।  


ফায়ার সার্ভিসের মতে, আগুনের ঘটনাস্থল একটি অপরিকল্পিত ভবন হওয়ায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারায় নিতুনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অনিরাপদ ভবন নির্মাণ ও অগ্নিনিরাপত্তার অভাবের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।  


নিতুনের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।