নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতার ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংকট সমাধানে সরকারকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জানান, নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে দেরি করলে জনগণ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এবং এতে সংকট আরও তীব্র হবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহিদ আসাদের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন হাবিবুর রহমান রিজু। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আমান উল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, জোনায়েদ সাকি, খন্দকার লুত্ফর রহমানসহ অন্যান্যরা। মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ না পাওয়ায় জনগণ তাদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার হারিয়েছে। তাই দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি।
তিনি বলেন, সময়ক্ষেপণের ফলে অন্য শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এবং জনগণের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। নির্বাচন দেরি করলে সমাজে বৈষম্য আরও বাড়বে। তিনি সরকারের কাছে আশা প্রকাশ করে বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান সরকারকে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনটি কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার একটি মাধ্যম নয় বরং এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত করুণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া বন্ধপ্রায় এবং স্বাস্থ্যখাতে সেবা ভেঙে পড়েছে। এসব সমস্যার সমাধান অতীতের ভুলের সংশোধন ও নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন দ্রুত হলে জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে কাজ করার দায়বদ্ধতা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থাকবে।
ছাত্র অভ্যুত্থান ও জনগণের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, সমাজের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা এখনো এমন কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না যা জনগণের আশা পূরণে কার্যকর। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে যেসব দল একসঙ্গে কাজ করছে, তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি, যা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে হলে তা আলোচনার ভিত্তিতে করা যেতে পারে। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো দ্রুত শেষ করা দরকার। তিনি বলেন, উনসত্তরের আন্দোলন থেকে শুরু করে অসংখ্য জীবনদানই ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের জন্য।
আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব। মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ন্যূনতম বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের অধিকার রক্ষায় আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান। তারা মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।