করাচি থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি সমুদ্রপথে পণ্যবাহী জাহাজ, ভারতের উদ্বেগ বাড়ছে !

নিজস্ব প্রতিবেদক
সৌম্যা সাহা , কলকাতা প্রতিনিধি ভারত
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৫ই নভেম্বর ২০২৪ ১২:২০ অপরাহ্ন
করাচি থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি সমুদ্রপথে পণ্যবাহী জাহাজ, ভারতের উদ্বেগ বাড়ছে !

গত বুধবার পাকিস্তান থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি সমুদ্রপথে যোগাযোগের সূচনা হলো। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে সরাসরি নৌপথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হলো। করাচি থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো ওই জাহাজে ৩০০টিরও বেশি কন্টেইনার ছিল। এই পদক্ষেপকে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।


বাংলাদেশের পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ এই ঘটনাকে ‘দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "এই নতুন নৌপথ সাপ্লাই চেইনকে আরো সহজ করবে, ট্রানজিট সময় কমাবে এবং ব্যবসার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।" বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।


ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সরাসরি নৌপথটি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, পাকিস্তানি জাহাজের চট্টগ্রামে প্রবেশের মাধ্যমে মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা এবং বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পণ্য প্রবাহের সম্ভাবনা বাড়ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্রের একটি বড় চালান উদ্ধার হয়েছিল, যা আসামের বিদ্রোহী গোষ্ঠী উলফারের উদ্দেশ্যে ছিল। এই ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে।


এছাড়া, গত আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চায়। ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাচ্ছে, যা তাদের ভারতের থেকে আলাদা করে ফেলতে পারে। 


তবে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সরকারের উচ্ছ্বাস সত্ত্বেও, ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, এই নতুন নৌপথ ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা এবং ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে।


এদিকে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক নৌ মহড়া ‘আমান ২০২৫’-এ অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।