আগামী ১৯ আগস্ট থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী খুলে দেওয়া হবে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র। করোনা মহামারির থাবায় লকডাউনে বন্ধ থাকা পর্যটন খাত অর্ধেক খুলে দেওয়ার ঘোষণায় কয়েক হাজার কোটি টাকা লোকসান মাথায় নিয়ে আবারও আশার আলো দেখছেন পর্যটন সেক্টরের ব্যবসায়ীরা।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর তথ্যমতে, ২০১৯ সালের জিডিপিতে পর্যটন খাত দেশের অর্থনীতিতে চার শতাংশ অবদান রেখেছিল। করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের পর বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অভ্যন্তরীণ পর্যটনের মাধ্যমে কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠার প্রচেষ্টায় ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। মহামারির কারণে পর্যটন খাতকে গত বছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে। এ শিল্পে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই হতাশ হয়ে অন্য ব্যবসায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সাড়ে ৪ মাস ধরে স্তব্ধ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। পহেলা এপ্রিল থেকে টানা বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার জেলার পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। বৃহস্পতিবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের আদেশে সরকারের সকল পর্যটন ও বিনোদনের স্থানগুলো আবারও পর্যটকের কোলাহলে মুখরিত হবে। সাড়ে চার মাসের ক্ষত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পসহ সকল পর্যটন কেন্দ্র। এমন আশায় বুক বাঁধছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের কলাতলি, লাবনী, সুগন্ধা, কবিতা চত্বরসহ ১১টি পয়েন্ট ও হিমছড়ি, মেরিন ড্রাইভ, ইনানী, সেন্টমার্টিন, ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু ও টেকনাফের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারও পর্যটকে ঠাসা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এখনো সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, গত লকডাউনে যে লোকসান হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আবারও লকডাউনের কবলে পড়ে লোকসানের অংকটা বড় হয়েছে। আগামী ১৯ আগস্ট যেহেতু খুলছে, তাই সবাই প্রস্তুত হচ্ছে ব্যবসার জন্য। এখন দেখার বিষয়, বিধিনিষেধ দীর্ঘ মেয়াদে তুলে নেওয়া হচ্ছে কি না। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটির সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ বলেন, আগামী ১৯ আগস্ট ৫০ শতাংশ হোটেল-মোটেল খোলার অনুমতি মিলছে। সে হিসেবে পর্যটন ব্যবসায়ীরা কাজ করবে। তবে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধির কঠোর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করবে। যদি কেউ নির্দেশনা ভাঙার চেষ্টা করে তাহলে জেল-জরিমানাও হতে পারে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম বলেন, কিছুদিন পর পর লকডাউনের কারণে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা চরম লোকসানে পড়েছিল। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লোকসান কাটিয়ে উঠা কঠিন। তাই কিছু ব্যবসায়ীকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। হোটেল পিংসোর ব্যবস্থাপক সামিউল আলম শুভ বলেন, দুশ্চিন্তা কাটিয়ে সবকিছু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এক প্রকার ভুতুড়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। হয়তো সেই অন্ধকার কাটিয়ে আলোর মুখ দেখব আমরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।